সিএইচটি টু ডে ডট কম। আগামী ১১ অক্টোবরে মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। অন্যথায় এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার দ্বিগরাজে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির লংমার্চের সমাপনী সমাবেশে এই ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশে ‘সুন্দরবন ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।
জাতীয় কমিটির লংমার্চ চলাকালে ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী ঢাকায় ঘোষণা দেন, আগামী ২২ অক্টোবর রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ শনিবার দ্বিগরাজে লংমার্চের সমাপনী সমাবেশে বলেন, “বুকের রক্ত দিয়ে হলেও জনগণকে নিয়ে দেশবিরোধী সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান প্রতিহত করা হবে।” তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহ সমাপনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এর আগে বিকেলে লংমার্চ বাগেরহাটের মংলা উপজেলার দ্বিগরাজে পৌঁছায়। মংলা রওনা দেয়ার আগে বাগেরহাটের পুরাতন কোর্ট চত্বরে লংমার্চের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “সুন্দরবন-বিনাশী অসম রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি অবিলম্বে সরকার বাতিল না করলে এর সঙ্গে সরকারের যেসব কর্তাব্যক্তি জড়িত, প্রয়োজনে গণ-আদালত বসিয়ে তাদের বিচার করা হবে।”
শহীদুল্লাহ বলেন, “এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রতিদিন ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সসাইড, ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সসাইড ও দুই হাজার ৬০০ টন কয়লা পোড়া ছাইভস্ম তৈরি হবে। এ ছাড়া এলাকায় হবে এসিড বৃষ্টি। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণিকা, মারকারি বা পারদ, ক্রোমিয়াম, তেজষ্ক্রিয় ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, বিষাক্ত আর্সেনিক, শেলেনিয়ামসহ পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান র্নিগত হবে। এতে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে সুন্দরবন।”
জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, “ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ১৫ ভাগ বিনিয়োগ করে সুন্দরবন ধ্বংস করে ৫০ ভাগ লাভ কোনো রয়েলটি ছাড়াই তার দেশে নিয়ে যাবে। জাতীয় স্বার্থে অসম এ চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তা না হলে আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।” আনু মুহাম্মদ বলেন, “সুন্দরবনের মাত্র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ও ল্যান্ডস্কেপ জোনে এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।”
বাগেরহাট জেলা তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক রনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা সরদার রুহিন হোসেন প্রিন্স, সৈয়দ আবু জাফর, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খলিকুজ্জামান, শুধংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট নেতা আজিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু প্রমুখ।