শিরোনামঃ

সুকুমার আমার স্নেহভাজন একজন সংবাদকর্মী : ওয়াদুদ ভুইয়া

সুকুমার বড়ুয়া আমার স্নেহভাজন একজন সংবাদ কর্মী। তার ছোট বেলা থেকেই তাকে আমি জানি। ৯৩/৯৪ সালের দিকে কোন একদিন আমার কাছে এসে সে বললো ভাই, আমি সাংবাদিতা করে পার্বত্যবাসী ও তাদের সমস্যাগুলো জাতীকে জানাতে চাই। আপনি আমাকে যেকোন একটি পত্রিকায় কাজ করার ব্যবস্থা করে দিন।Wadud আমি তাকে দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। দিন যাচ্ছে ছেলেটি অনেক ভাল লিখছে।
৯৬-৯৭ এর দিকে পাহাড়ে শান্তি চুক্তি বিরোধী কঠিন আন্দোলন চলছে আমাদের নেতৃত্বে। মিডিয়া বলতে তখন আন্দোলন কারীদের পক্ষে কিছুই নাই। একদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলন তার উপর বহুল প্রচারিত পত্রিকাগগুলো শান্তি চুক্তি তথা সরকারের পক্ষে। টিভি বলতে কিছুই নাই। নিউজ পাঠানো সে এক কঠিন কাজ। তখন নাই মোবাইল, নাই ইন্টারনেট, নাই ডিজিটাল টেলিফোন। একমাত্র এনালগ টেলিফোন, তাও আবার পুরো জেলা শহরে বেসরকারি মাত্র কয়েকটি টেলিফোন। সুকুমার প্রতিদিন আমার বাসায় এসে আমার 0371-849 নাম্বার থেকে টেলিফোনে সংবাদ পাঠাতো, আর পত্রিকা অফিস তা টেলিফোনে শুনে শুনে লিখে নিত। তার নিউজ পড়ার হিড়িক পড়ে গেল। দিনকাল জেলা শহরে প্রচুর জনপ্রিয় হয়ে পড়লো। শান্তি চুক্তি বিরোধী আন্দোলনকারীদের নিউজ বলে কথা, অনেক হট। গ্রেফতার, হয়রানি, হামলা, নির্যাতন, হত্যা, দলে দলে আওয়ামী মন্ত্রী আসতো আর সেই মন্ত্রীদের ঝাড়ু প্রদর্শন বিক্ষোভ, পুলিশ-বিডিয়ারের নির্বিচারে গুলি করা ও আন্দোলনকারীদের লাগাতার আন্দোলন ও পরবর্তি কর্মসূচী ঘোষনা ইত্যাদি জানার কৌতুহল নিয়ে পত্রিকার হকার দোকানে পত্রিকা সংগ্রহের জন্য পাঠকদের ভীড় জমে থাকতো। কারন পত্রিকার গাড়ি আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যেতো, তাই পাঠকদের অগ্রিম সিরিয়াল দেয়া পত্রিকার দোকানে।
এরপর সুকুমার আগ্রহী হয়ে উঠলো জনপ্রিয় কোন পত্রিকায় লেখার জন্য কিন্তু অন্যকোন জনপ্রিয় পত্রিকা শান্তি চুক্তি বিরোধীদের নিউজ করে না, কিন্তু কি আর করা তখনকার অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবেই তাকে লেখার ব্যবস্থা করে দিলাম। ইনকিলাব তখন সারা দেশে এবং পার্বত্য অঞ্চলে অনেক জনপ্রিয় একটি গনমাধ্যম। যা পাহাড়ের মানুষ অনেক পড়তো। পত্রিকাটির পলিসিও ছিল শান্তি চুক্তি বিরোধী। তাই বেটে বলে মিলে যায় সুকুমারে জন্য। শুরু হয়ে যায় তার ইনকিলাবে লেখা। এভাবে নানাহ মিডিয়ায় কাজ করে আসছে আজ অবদী।
কোন এক সময় সুকুমার আমাকে বললো ভাই আমি ছাত্রদল করতে চাই, আমাকে ছাত্রদলের কমিটিতে দায়িত্ব দিন। আমি বললাম বড়ুয়ারাতো সাধারণত জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল করে না, তুমি করতে গেলে তোমার কি সামাজিক ভাবে কোন অসুবিধা হবে কিনা? সে বললো আমি সেই ট্রেডিশন ভাংতে চাই এবং আমি প্রমান করবো আমি প্রকৃত জাতীয়তাবাদী। সে থেকেই সুকুমার খাগড়াছড়ি জেলায় জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করে গেল। সে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হল। ২০০৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি’র সম্মেলন হল, কমিটি হচ্ছে, সুকুমারের আবদার তাকে যেন জেলা বিএনপি’র ১০১ নং সদস্য হিসাবে রাখি আমরা, কারন তখন জেলা কমিটিগুলো ১০১ সদস্য বিশিষ্ট। আমরা রাখলামও তাকে সেই সর্বশেষ সদস্য হিসাবে। অবশ্য তার যোগ্যতা ও ত্যাগও ছিল। যেমন দল করার কারণে আওয়ামী সরকার তাকে জেলে নিয়েছে বার বার। ৯৬ এর সরকারের সময় আওয়ামী এক সন্তাষী তাদের রিমান্ড কক্ষে তাকে ধরে নিয়ে হাতুড়ী দিয়ে তার সারা শরিরে নির্যাতন চালায় নির্মমভাবে।
হুম, তবে কয়েক বছর যাবত সে মানষিক যন্ত্রনা ও কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করেছে হয়ত অজানা তার ব্যক্তিগত কোন কারনে। তাই নিজেকে সে ভাসিয়ে দিয়েছিল কষ্ট লডাইয়ের মাঝে। নিজেকে অবহেলা করেছে, আঘাত করেছে। সৃষ্টি করেছে কঠিণ শারিরিক রোগ। চিকিৎসা করেনি, মনে হয় ইচ্ছা করেই। কারন সে থাকতে চাইনি আমাদের মাঝে, অভিমান করেছে বোধ হয়।
তাই আজ সেই সুকুমার চলে গেল না ফেরার দেশে। আমরা আর তাকে কোনদিন পাবো না। সে আজ সকালে মারা গেছে। রেখে গেছে তার দুটি নাবালক সন্তান ও দারিদ্রতা এবং কিছু স্মৃতি। অবশ্য আমরা সরকারে থাকতে তার বউ ও আত্নিয়দের সরকারি চাকুরি দিয়েছিলাম, হয়ত এই চাকুরি দিয়েই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে তার সন্তান ও স্ত্রী। হা সুকুমার তুমি ভেবো না, আমরা তোমার সন্তানদের পাশে থাকবো চিরকার আমাদের সাধ্যমত। কারন সুকুমার তোকে আমিও অনেক স্নেহ করতামরে, তোর চলে যাওয়ার পর তা বেশী করে বুঝতে পারছি, তোকে অনেক ভালবাসতামরে। মাঝে গত কয়েক বছর তোর অভিমানি পাগলামিগুলোকে আদর করতাম বোধহয়।
লেখক: খাগড়াছড়ির জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 441 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen