শিরোনামঃ

সরকার শর্ত দিয়ে দিয়ে আলোচনার পথ বন্ধ করলেও আমরা আলোচনায় প্রস্তুত : খালেদা জিয়া

সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার শর্ত জুড়ে দিয়ে আলোচনার পথ বন্ধ করলেও আমরা এখনো আলোচনা করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, “সকলের সামনে প্রশ্ন, দেশে গণতন্ত্র থাকবে, নাকি স্বৈরশাসন চলবে? সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে, নাকি একতরফা একদলীয় একটি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হবে? দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, নাকি সংঘাত হানাহানি চলতে থাকবে? আমরা সংঘাত-হানাহানি চাই না। আমরা শান্তি চাই। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছি।Khaleda zia

বৃহস্পতিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত বিএনপির বিপ্লব ও সং হতি দিবসের সমাবেশে এক ভিডিও ভাষণে আরো বলেন, আমি আজও বলছি ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের আলোচনা শুরুর জন্য আমরা এখনও অপেক্ষা করছি।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশের এক সংকটজনক মুহূর্তে এবার সিপাহী-জনতার মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এসেছে। এই দিনটিতে ১৯৭৫ সালে সৈনিক ও জনতার মিলিত উত্থানে তাসের ঘরের মতো ধসে গিয়েছিল জাতিদ্রোহী ভয়ংকর চক্রান্ত। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিপ্লবে সেদিন যারা অংশ নিয়েছিলেন, আমি আজ তাদেরকে অভিবাদন জানাচ্ছি। সেদিনকার বিপ্লবে কেবল স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াই মুক্ত হননি। চক্রান্তের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আজও বাংলাদেশ সংকট-কবলিত।”

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “আমরা বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিরসন করতে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে পক্ষে। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে এই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকটের সুরাহা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা আসবে না। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনও সম্ভব হবে না। ”

খালেদা জিয়া বলেন, “কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের দাবি মানছেন না। তিনি ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি বিরোধী দল থেকে তার সরকারে কিছু মন্ত্রী নেয়ার কথা বলেছেন। এ প্রস্তাব জনগণ গ্রহণ করেনি। আমি তাই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের সরকার গঠনের একটা প্রস্তাব তুলে ধরি। আমি এ নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাই। প্রস্তাবটি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদেও তুলে ধরা হয়। কিন্তু সরকারি দল এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এ নিয়ে আলোচনা করতেও তারা রাজি হয়নি। এরপর বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করি।”

খালেদা জিয়া বলেন, “আমি বলেছি, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয় তাহলে আমরা আন্দোলন করবো না। আমি এমন আভাসও দেই যে, সমস্যা নিরসনে সরকার যদি কোনো এজেন্ডা নির্ধারণ ছাড়াও আলোচনায় বসতে চায়, আমরা তাতেও রাজি আছি। সে ক্ষেত্রে আলোচনা ও আন্দোলন পাশাপাশি চলবে।”

তিনি বলেন, “ এরপর প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করেন। গণভবনে দাওয়াত দেন। তিনি বলেন, হরতাল প্রত্যাহার করে ২৮ তারিখেই আলোচনা করতে হবে তার দেয়া প্রস্তাব নিয়ে। আমি বলেছি, আমরা তার এবং আমার দেয়া উভয় প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় রাজি। তবে সেটা ২৯ তারিখের পর যেকোনো দিন হতে পারে। ওই সময়ে আমার একার পক্ষে কেন আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় তা-ও আমি বলেছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি আরো বলেছি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবি মেনে আলোচনায় রাজি থাকলে পূর্বঘোষণা মোতাবেক আমি এই মুহূর্তে আন্দোলনের সব কর্মসূচি স্থগিত করে ২৮ তারিখেই আলোচনায় বসতে পারি। প্রধানমন্ত্রী আমার কথা মানেননি।

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, “আমার সঙ্গে টেলিফোনে করা আলোচনা গোপনে রেকর্ড করে ইতোমধ্যে তা সরকারি উদ্যোগে প্রচারও করা হয়েছে। এই রেকর্ডিংয়ের কথা আমাকে আগে জানানো হয়নি। এমনকি সেটি প্রচারের ব্যাপারে আমার কোনো সম্মতিও  নেয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি। সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে সরকারের যে কোনো সদিচ্ছা নেই, এর মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।”

খালেদা জিয়া অভিযোগ করে  বলেন,  রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সম্পদ ব্যবহার করে দলীয় প্রচার কাজ চালানো হচ্ছে। প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মতো বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারীদের ব্যাপারে সমাজে এখনও নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে। মোটকথা, এ সরকারে অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্পূর্ণ অসম্ভব তা তারা নিজেরাই প্রতি পদক্ষেপে প্রমাণ করেছে। এ অবস্থায় জনগণকে এর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের পথ পরিহারের জন্য বিদায়ী সরকারের প্রতিও আমি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 236 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen