সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার সম্প্রীতি তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হাতি মার্কায় নির্বাচন করছেন।
বিগত ২০০৮ সনের সংসদ নির্বাচনে উষাতন তালুকদার নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও এবার প্রধান বিরোধীদল বিএনপি মাঠে না থাকায় তিনি বিজয়ের প্রত্যাশায় জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় অবিরাম নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি রাঙামাটির ৬ প্রার্থীর মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ১০ দফা সম্বলিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে জেএসএসের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদত প্রণতি বিকাশ খীসাকে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে “উষাতন তালুকদার সমর্থক ফোরাম ” নামে একটি আইডি খুলে সেখান থেকেও নির্বাচনী প্রচারনা চালানো হচ্ছে।
এদিকে তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর করেনি। পার্বত্য ভুমি কমিশন আইন নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তহীনতা বিরাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা রাঙামাটিতে উগ্র জাতীয়তা, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন। চুক্তি বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে দেশে গনতান্ত্রিক ও অসম্প্রদায়িক চেতনার সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরী। ইতিপুর্বে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা দল বা ব্যাক্তি স্বার্থে জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার উত্তরসুরী হিসেবে জাতীয় সংসদে কথা বলতে উষাতন তালুকদার রাঙামাটির জনগনের কাছে হাতি মার্কা ভোট চেয়েছেন। উষাতন তালুকদার তার নির্বাচনী ইশতেহারে যে সব প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন —
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এবং এতদাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২. এলাকায় সুষম ও পরিবেশমুখী উন্নয়নের ধারা গড়ে তোলার মাধ্যমে সুযোগ-বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ গড়ে তোলা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন এবং স্থানীয়ভিত্তিক বাণিজ্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে।
৩. সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদী অপতৎপরতা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূলীকরণে দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল শক্তির সাথে একাত্ম হয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা হবে।
৪. সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। নারী উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও স্বল্প বা বিনা সুদে ঋণদান কর্মসূচী গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। নারীদের উপর সকল প্রকার সহিংসতা ও নিপীড়ন বন্ধের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৫. আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্বকীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে।
৬. রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজে অনার্স ও স্নাতকোত্তর কোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পার্বত্যাঞ্চলে কারিগরী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও প্রাথমিকসহ শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি ও মানোন্নয়ন করার লক্ষ্যে ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৭. কাপ্তাই হ্রদের জলসীমা নির্ধারণ, জলেভাসা কৃষি জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করা এবং হ্রদের পানির উচ্চতা হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণসহ কৃষি ঋণের ব্যবস্থা চালু করার প্রচেষ্টা নেয়া হবে।
৮. ফলজ-বনজ বাগান সম্প্রসারণসহ উৎপাদিত ফল-মূল রক্ষণাবেক্ষণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। সহজ শর্তে কৃষি ঋণসহ জুমচাষীদের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, জুম চাষের সময় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হয়রানি বন্ধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
৯. প্রতিবন্ধীদের সমস্যাদি নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১০. জেলে-তাঁতিসহ শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।