শিরোনামঃ

এসপিসহ ৩ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

রাঙামাটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। একের পর এক সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে, অথচ পুলিশ কিছুই করছে না। তারা সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে রয়েছে। ফলে দিন দিন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এজন্য দায়ী এসপিসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। অবিলম্বে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য জেলা আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। সরকারি দলের নেতারা এসব কথা বলেন।
তারা পুলিশের ওপর চরম ক্ষুব্দ। চেয়েছেন অবিলম্বে এসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ। এজন্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার হরতাল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন সরকার দলীয় নেতারা। তারা বলেন, দাবি অনুযায়ী এর মধ্যে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় পরবর্তীতে যে কোনো মুহূর্তে লাগাতার হরতালসহ কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে। অপরপক্ষে পুলিশের ওপর হামলা এবং হরতালের নামে বিশৃঙ্খলা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য অজ্ঞাত ৭ শতাধিক আসামি দিয়ে ছাত্রলীগসহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে রাঙামাটি কোতোয়ালি ১২ ফেব্রুয়ারি ১টি এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে, পুলিশ।
ছাত্রলীগ নেতা সুপায়ন চাকমার ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ এবং বিনা উস্কানিতে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদসহ এসপি সাঈদ তারিকুল হাসান, এএসপি জাহাঙ্গীর ও সদর থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়ার অপসারণ দাবিতে জেলা ছাত্রলীগের ডাকে মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।
তার আগের দিন সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা সুপায়ন চাকমাকে কুপিয়ে আহত করে একদল দুর্বৃত্ত। ঘটনার জন্য পিসিপিকে দায়ী করেছে ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে ঘটনার দিন সঙ্গে সঙ্গে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। এতে পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন পুলিশ এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে রবার বুলেট, টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পুলিশের হামলায় তাদের ৪০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা। এসব ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থানে সরকারি দল এবং পুলিশ। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার পরিস্থিতি। বর্তমানে শহরে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। জনমনে তৈরি হয়েছে অজানা আতঙ্ক উৎকণ্ঠা।
তবে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাকে প্রত্যাহার বা অপসারণের দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। বলেছেন, এ নিয়ে সরকার যা ভালো মনে করে তাই হবে। কিন্তু আমি থাকাকালে কোনো অবস্থাতেই এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে দেয়া হবে না।
তিনি জানান, সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনে পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চার মামলা দায়ের করা হয়েছে। নেতার ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় শহরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। ওই সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করে একটি এবং পরের দিনে মঙ্গলবার ছাত্রলীগের ডাকা হরতালে এএসপিকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নেয়ার পথে বাধা দেয়া ও বিকালে পুলিশ ও পথচারীর ওপর হামলার ঘটনায় দুই শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করে তিনটি মামলা হয়।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, একের পর এক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সন্ত্রাসী হামলা করছে। অথচ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো তৎপরতা-ই নেই। পুলিশ এতে একেবারে নির্লিপ্ত। উল্টো সোমবার সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আহূত ছাত্রলীগের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলা করেছে পুলিশ। এ সময় টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপসহ বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এমনকি ফাঁকা গুলিও ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য দায়ী পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর ও সদর থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়াসহ পুলিশ কর্মকর্তারা। এসবের দায়ে অবিলম্বে এ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে তাদেরকে অপসারণ করতে হবে।
হরতাল উত্তর সমাবেশ থেকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা অবিলম্বে রাঙামাটির এসপি সাঈদ তারিকুল হাসান, এএসপি জাহাঙ্গীর ও কোতোয়ালি থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়াকে অপসারণের দাবি জানান। এজন্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা। অন্যথায় লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
তারা বলেন, একের পর এক আমাদের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সর্বশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি শহরে জেলা ছাত্রলীগের নেতা সুপায়ন চাকমাকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। গত বছর ৫ ডিসেম্বর জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া আরও কয়েক নেতাকর্মী সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ তাতে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের ওপর নির্লজ্জ হামলা করেছে পুলিশ। জেলায় দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এসপি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তার নির্দেশে আমাদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। অবিলম্বে এসপি সাঈদ তারিকুল হাসান, এএসপি জাহাঙ্গীর ও কোতোয়ালি থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়াকে অপসারণ করে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তারা থাকলে পরিস্থিতি আরও খুব খারাপের দিকে চলে যাবে।
এদিকে কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের হামলায় তিন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা বলেন, এরই মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হানিফকে সংগঠনকে থেকে অব্যহতি এবং ইয়াসিন আরাফাত নামে একজনকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। ইয়াসিন আরাফাত ছিলেন ছাত্রশিবিরে।
ছাত্রলীগের হামলার শিকার চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশ ও ঢাকার দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি এম কামাল উদ্দিন, চ্যানেল-৯ প্রতিনিধি সাইফুল বিন হাসান এবং দৈনিক সমকাল পত্রিকা এবং একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধি সত্রং চাকমা এখনও চিকিৎসাধীন। সাংবাদিকদের ওপর হামলার দায়ে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে আইনগত ব্যবস্থাসহ পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন, রাঙামাটি প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ফোরামসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।

 

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 423 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen