সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটিকে রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে আগামী বর্ষায় আবারো দুর্যোগের মুখে পড়বে রাঙামাটি। অতীতের তুলনায় জীবনের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও সড়ক ও অবকাঠামোর ক্ষতি কমানো সম্ভব নয়। বরং তা বড় আকার ধারণ করবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা রাঙামাটি শহরকে সাজানোর কোন মাষ্টার প্ল্যান আজো পর্যন্ত করা হয়নি।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্প্রতি রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধান ও পরিবেশগত সার্বিক সমীক্ষা কমিটির সভায় এসব কথা বলেন জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে সমীক্ষা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অনুসন্ধান ও সমীক্ষা কমিটির আহবায়ক সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান। এ কমিটির সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব নন্দ দুলাল বণিক, পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের ছাড়পত্র বিভাগের পরিচালক সৈয়দ নাজমুল আহসান ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সিনিয়র প্লানার শাহীন আহম্মেদ। এছাড়া পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ জেলা ও উপজেলা সকল দপ্তরের প্রধানগণ, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীলসমাজের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব নন্দ দুলাল বণিক বলেন, বিগত ১৩জুন ২০১৭ এ এলাকায় পাহাড় ধসে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এখানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রতিনিধিরা এসে ঘুরে গেছেন। সরকারি বেসরকারি ভাবে পরিদর্শন করা হয়েছে কিন্তু আসল তথ্য অনুসন্ধান কেউ করেনি। আবার যদিও কেউ সঠিক অনুসন্ধান করে তা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হয়েছে। যার কারনে উন্নয়নের ব্যাঘাত যত্রতত্র হয়েছে। বর্তমানে সরকারের কয়েক সেক্টর থেকে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে এ কমিটির সুপারিশে আগামী ৬ মাসের মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় উন্নয়ন কাজ শেষ করার জন্য মতামত দেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ছাড়পত্র) সৈয়দ নাজমুল আহসান বলেন, পাহাড় ধসের অনেক গুলো কারন উঠে এসেছে। এখন প্রয়োজনে আবার সরেজমিনে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে তার আলোকে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবগত করা। আমরা যে সংস্থাই কাজ করি না কেন কাজটি হতে হবে উন্নত মজবুত ও টেকসই। পার্বত্য চট্টগ্রাম আর সমতল এক নয়। তাই কাজ হাতে নেওয়ার আগে সবকিছু মাথায় রেখেই কাজ শুরু করতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিনিয়র প্লানার শাহীন আহম্মেদ বলেন, উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হলো সঠিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া। এখানে দীর্ঘক্ষণ মতামতের আলোকে যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটা হলো অপরিকল্পিত বাসস্থান তৈরী,ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের কারনে পাহাড় ধস হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন জলবায়ুর পরিবর্তনে এ দুর্যোগ হয়েছে। এখন এ দুর্যোগ থেকে আমরা কি ভাবে কেটে উঠতে পারি সে বিষয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা রাঙামাটি এসে জানতে পারলাম রাঙামাটির জন্য কোন মাষ্টার প্ল্যান নাই, মাষ্টার প্ল্যান না থাকলে কোথায় কি হবে, কোন এলাকা ঝুকিপুর্ণ আবার কোন এলাকায় উন্নয়ন করলে সবাই লাভবান হবে এসব কিছু করা সম্ভব হবে না। সবার আগে প্রয়োজন মাষ্টার প্ল্যান, যার সুত্র ধরে উন্নয়নসহ সব ধরণের কাজ করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিদিন আমরা নতুন নতুন একটা কিছু নিয়ে কাজ করে থাকি। এর মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ হলো পাহাড় ধস। এ পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ঘাট রক্ষা করার জন্য আরো একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট একটি নীতিমালা তৈরী করতে হবে। সাথে সাথে পাহাড়ের গাছপালা কাটা লাগানোর জন্য একটি নীতিমালা তৈরী করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
সভায় জানানো হয়,আগামী জুনের মধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ঘটে যাওয়া দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় উন্নয়ন কাজ শেষ করতে সরকারকে মতামত পেশ করবেন মন্ত্রনালয়ের গঠিত ৪ সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান ও পরিবেশগত সার্বিক সমীক্ষা কমিটি।