সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায়ে আল বদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের ফাঁসির রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে আনীত ১১ অভিযোগই প্রমাণিত হওয়ায় এ শাস্তি দেয়া হয়েছে। রোববার ট্রাইব্যুনাল-২এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য হলেন- বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
এই প্রথম কোনো আসামির বিরুদ্ধে আনীত সবগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায় কার্যকর করতে রাষ্ট্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বেলা ১১টার সময় চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিরা এজলাস কক্ষে বসেন এবং পাঁচ মিনিট পরে রায় পাঠ শুরু করেন।
রায় ঘোষণার আগে চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা এই মামলা শুনানির সময় খুব সতর্ক ছিলাম। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলায় সাক্ষীগ্রহণ ও যুক্তি-তর্ক শেষ করেছেন।”
ট্রাইব্যুনাল বলেন, “এটি আমাদের ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়। মোট ১৫৪ পৃষ্ঠার ৫৫৩ প্যারায় রায়। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ে মোট ৪১ পৃষ্ঠার পাঠ করা হবে।”
গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন ১১টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ গঠন হয়। গত ২ মে দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় তাদের হাজির হতে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ১৫ জুলাই প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের ভাগ্নি মাসুদা বানু রত্না।
পরে আরো সাক্ষ্য দেন শহীদ মুনীর চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক সিরাজুল হক খান, সাংবাদিক সিরাজ ঊদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বি, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সন্তানরা, সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফার ছেলে ও ভাই, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, চিকিৎসক মোহম্মদ মর্তুজার স্ত্রী’র ভাই ওমর হায়াৎ, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বোন ফরিদা বানু, রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বেঁচে ফিরে আসা একমাত্র ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ফেনীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শরীয়ত উল্লাহ বাঙালি এবং একাত্তরে আশরাফুজ্জামানের ভাড়া বাসার মালিকের ছেলে আলী সাজ্জাদ।
এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে স্বাধীনতার পরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তকারী তৎকালীন এনএসআই কর্মকর্তা সামাদ তালুকদার, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়ার চৌধুরীর ছেলে তাসলিম হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে মিশুক মুনীর ও ফেনীর বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ সাক্ষী দেন।