সিএইচটি টুডে ডট কম,
রাঙামাটি। চলতি সংসদ অধিবেশনে পার্বত্য চট্রগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০১৩ই পাশ করার দাবী জানিয়েছে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি। শুক্রবার বিকালে এক বিবৃতিতে সমিতির পক্ষ থেকে দাবী করা সংসদের শেষ অধিবেশন শেষ পর্যায় হলেও রহস্যজনক কারনে এখনও ভুমি মন্ত্রনালয় আনীত সংশোধনী বিল এখনো সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। বরং ভুমি মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা চুক্তি বিরোধীদের সাথে বৈঠক করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শারদীয় দুর্গা পূজা ও ঈদের ছুটির পর ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর কেবলমাত্র ৫ দিনের জন্য অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নবম সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি এতে বিলটি এই মেয়াদে পাশ হওয়া বিষয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংশোধনী প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত ১৬ জুলাই ২০১৩ জাতীয় সংসদের কেবিনেট সভা কক্ষে ভূমি কমিশন বিলের উপর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত করে, এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে সংশোধনী দাবীনামাসমূহ পুনরায় উত্থাপন করা হয়। এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত করে, যেখানে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে ভূমি কমিশনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধিতাকারী পার্বত্য যুব ফ্রন্ট, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, বাঙালি ছাত্র পরিষদ ইত্যাদি ভূঁইফোড় সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেও আমন্ত্রণ জানায়। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর ২০১৩ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আবার বৈঠকে বসে। উক্ত সভার আলোচ্য সূচিতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ বিলটি ১ নম্বর আলোচ্য বিষয় হলেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে কোনরূপ আলোচনা না করে ঝুলিয়ে রেখে দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনটি সংশোধনে সরকার কালক্ষেপণ ও ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে এবং এরই অংশ হিসেবে সংসদীয় কমিটিতে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারেরই বরখেলাপ এবং চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের চরম অসদিচ্ছারই প্রতিফলন বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি মনে করে। নির্বাচনী অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও এ সরকারের মেয়াদকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হয়েছে, সরকারের শেষ মেয়াদে এসে ভূমি কমিশন আইন যথাযথভাবে সংশোধনের মাধ্যমে সেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ কিছুটা হলেও লাঘবের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ভূমি কমিশন আইন সংশোধনে সরকারের পিছিয়ে যাওয়ার ফলে সেই সম্ভাবনাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বাধ্য।
বিবৃতিতে হুশিয়ারী উচ্ছারন করে বলা হয়, এ সরকারের প্রতি পার্বত্যবাসীর সেই পূঞ্জিভূত ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরো জোরদার হবে। শুধু তাই নয়, সরকারের এই পশ্চাদাপসারণের ফলে সারাদেশের আদিবাসী জাতিসমূহের প্রতি সরকারের নেতিবাচক ইঙ্গিতও বহন করে, যা নি:সন্দেহে আওয়ামী লীগের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক হতে পারে না। ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের কাজ ঝুলিয়ে রাখার ফলে একদিকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ আরো প্রলম্বিত হবে, অন্যদিকে তেমনি এই ভূমি বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করবে। এতে করে ভূমিকে কেন্দ্র করে চলমান সংঘাত ও সমস্যা অধিকতর ঘনীভূত হবে এবং সরকার তথা দেশের শাসকগোষ্ঠীর প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের অনাস্থা ও অবিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পাবে।
বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ যথাযথ ও অনতিবিলম্বে সমাধানের স্বার্থে চলতি সংসদ অধিবেশনের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সুপারিশ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাশ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয় অন্যথায় যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সরকারই দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারী দেয়া হয়।