সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের উরাছড়ি গ্রামে দুই কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে অপরাজনীতি করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বিলাইছড়ি উপজেলার দুই কিশোরীকে নিয়ে নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর নামে কালিমা লেপন চেষ্টার প্রেক্ষাপটে দুই কিশোরীর পিতা মাতা সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি খোলাসা করলেও প্রপাগান্ডা ছড়ানোর প্রক্রিয়া থেমে নেই। ধর্ষিত কিনা সেটি প্রমাণ হওয়ার আগে ওই দুই কিশোরীর পরিবারসহ তাদের কমিউনিটির লোকজন নারীর সম্মান নিয়ে রাজনীতি করে নারীদের সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে সংশিষ্টদের এই খেলা বন্ধ করার অহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঘটনা যাদের নিয়ে তারা নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করলেও কল্পিত ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে তা চাউর করে দুই নিষ্পাপ কিশোরীকে যারা রাজনীতির ক্রীড়ানকে পরিণত করার চেষ্টা করছেন তাদের উদ্দেশ্য আর যাই হোক মানবতার কল্যাণ চিন্তার পরীপন্থী।
এদিকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কর্মকতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২৪ জানুয়ারী বুধবার চিকিৎসার জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি হওয়া বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের অরাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা দুই কিশোরীর চিকিৎসা কার্যক্রম শেষ হলে ২৬ জানুয়ারী শুক্রবার সকালে তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য যখন চিকিৎসকদের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পাদন করছিলেন ঐসময় হঠাৎ করেই চাকমা সার্কেল চীফ এর পত্মী রাণী ইয়েন ইয়েন এবং মানবাধিকার নেত্রী বাঞ্চিতা চাকমা হাসাপাতালে উপস্থিত হন এবং ওই দুই কিশোরীকে তাদের জিম্মায় দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় ওই দুই কিশোরীর মা-বাবা তাদের কন্যাদের নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার কথা বলে এ বিষয়ে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করে। পরে খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বিষয়টি বেআইনী বিধায় এ বিষয়ে বাঞ্চিতা চাকমা ও রাণী ইয়েন ইয়েনকে বুঝানোর চেষ্টা চালালে রাণী ইয়েন ইয়েনের সাথে প্রশাসনের বাকবিতন্ডা শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ঘটনার সময় শতাধিক পাহাড়ি যুবক হাসপাতালের চারদিক ঘিরে রাখে।
এদিকে ঘটনার পর পরই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান, রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়, রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাফিউল সারোয়ার, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ নিহার রঞ্জন নন্দী, রাঙামাটি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনী আক্তার এবং মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা।
ঘটনার সময় হাসপাতাল এলাকায় উশৃঙ্খল যুবকের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেতে থাকলে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে করাকরি আরোপ করে।
বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা অভিলাষ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমরা বিষয়টি শুনে বিসি¥ত হয়েছি, ‘মানবাধিকার সংস্থার মতো স্বনামধন্য সংস্থার সদস্য হয়ে বাঞ্চিতা ম্যাডাম এই কাজ করে সমাজের চোখে নিজের সম্মান খাটো করেছেন’। তিনি আরও বলেন, রাঙামাটিতে একটি সন্ত্রাস বিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনের ঠিক পূর্বক্ষণে পাহাড়ে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরীর পিছনে কারা কাজ করছে তা বুঝতে আমাদের বাকি নেই। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, সকলের রাজনীতি করার অধিকার আছে, রাজনীতির মাধ্যমে আমরা সবাই আমাদের নীতি অদর্শ তুলে ধরবো। তবে বাঁকাপথে জনমত ভিন্নখাতে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি আরো বলেন, দুই কিশোরীকে ব্যবহার করে এবং তাদের বিষয়টি প্ুিজ করে একটি মহল আবারও পাহাড় অশান্ত করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাঙামাটি ডেপুটি সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী জানান, কিশোরীদ্বয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাদের বিষয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টীম গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে তারা ধর্ষিত হয়েছিলেন কিনা।
চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় জানান, ওই দু’কিশোরী তার এবং তার স্ত্রী রাণী ইয়েন ইয়েনের সাথে যেতে রাজী হয়েছেন। তাছাড়া ওই কিশারীরা যেহেতু কোন অপরাধী নয় সেহেতু তাদের নেয়া যায়, কারন তারা আসামী নয়। তবুও এখানে যেহেতু আইনের বিষয় এসেছে সেহেতু আমরা আদালতে আইনের আশ্রয় নিব।
রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, কিশোরীদের লিগ্যাল অভিভাবক ছাড়া অন্যর জিম্মায় ছেড়ে দিতে পারি না। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে মুলত: ২৮ জানুয়ারীর মহাসমাবেশকে বানচাল করতে নানা প্রপাগান্ডা ও অশান্ত করা হচ্ছে রাঙামাটি শহরকে।
রাঙামাটির নেতৃস্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি গোষ্ঠি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অতীতের ন্যায় এবারো নোংরা খেলায় লিপ্ত হয়েছে। শান্ত পরিস্থিতি অশান্ত করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিনে জেলা শহরে বিক্ষিপ্ত ঘটনার চেষ্টা করা হলেও প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের মুখে তা ব্যর্থ হয়।
২৫জানুয়ারী রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে সিএনজি এবং মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে হলে দু’চালকের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা আসলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ।