সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বান্দরবানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেলে দিবসটি উপলক্ষে বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে শহরের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুধাংশু বিমল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি মো:শফিকুর রহমান।
এসময় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাস, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, পৌর কাউন্সিলর মো:হাবিবুর রহমান খোকন, অজিত কান্তি দাশ,দিলীপ বড়–য়া, সৌরভ দাশ শেখর, আবুল কালাম,সালেহা বেগম ,জেলা আওয়ামীলীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল কালাম মুন্না ,পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ,সাধারণ সম্পাদক সামশুল ইসলাম, সাবেক যুব নেতা চৌধুরী প্রকাশ বড়–য়া,জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী বাবর,জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তৌহিদুর রহমান চৌধুরী রাশেদ, সম্পাদক সুজন চৌধুরৗ সঞ্জয়,জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জনি সুশীল,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উসিং হাই রবিন বাহাদুর, আশরাফ হোসেন আশুসহ আওয়ামীলীগ,কৃষক লীগ,স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা
এসময় সমাবেশে বক্তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির জনক পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন,ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ তারিখ সকালেই বঙ্গবন্ধু নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতারা এবং জনগণের কাছে তাদের সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রাণবন্ত অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। সেই সময়ে প্রকাশিত পত্রিকা থেকে জানা যায়, বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকার তাঁর নির্দেশিত পথে যুদ্ধ পরিচালনা করে। নয় মাসের যুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে স্বাধীনতা অর্জনের পথে মুক্তিযোদ্ধা, জনতা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র হয়। জয় তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় মাত্র। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলা হয়। প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হলে পাকিস্তানী বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় তাঁকে সসম্মানে মুক্তি দিতে।
প্রবাসী অস্থায়ী আওয়ামী লীগ সরকার, সরকার পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।