সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা আর নেই। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ম্যান্ডেলার পরলোক গমনের খবর ঘোষণা করেন।
৯৫ বছর বয়সী ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের হাউটন শহরতলিতে নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড় চিকিত্সার অধীনে ছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণজনিত অসুস্থতার কারণে প্রিটোরিয়ার মেডিক্লিনিক হাসপাতালে প্রায় তিন মাস চিকিত্সা নেওয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর বাড়িতে ফেরেন তিনি।
ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালে ১৮ জুলাই। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮-এর নির্বাচনে বর্ণবাদবিশ্বাসী ও বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করার পক্ষপাতী দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালে জনগণের সম্মেলনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি মুক্তি সনদ প্রণয়ন করেন তিনি।
রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ম্যান্ডেলা শুরু থেকে অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ পাঁচ বছর মামলা চলার পর তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হন।
১৯৬১ সালে এএনসির সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ারও পরিকল্পনা নেন।
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করে সরকার। টানা ২৭ বছর বর্ণবাদী সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন ম্যান্ডেলার সহযোদ্ধারা। নানা দমন-পীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে।
১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ম্যান্ডেলা মুক্তি পান ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান ম্যান্ডেলা। শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। হলেন দেশটির প্রথম কৃঞ্চাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তার মৃত্যুতে বিশ্ব নেতাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।