শিরোনামঃ

প্রতিভাবান সাংবাদিক শৈলেন দে’র অকাল প্রয়াণ

আনোয়ার আল হক ॥ আকস্মিকভাবে চলে গেলেন রাঙামাটির প্রতিভাবান সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কবি শৈলেন দে। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাঙামাটি জেনারেলshilen da হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মঙ্গলবার রাতে তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তিনি কয়েকবার বমি করেন। হাসাপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি তার অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে তার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে তার রক্তচাপ একেবারে নীচে নেমে যায় এবং তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১২টার কিছু আছে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রতিভাবান এই নির্লোভি সাংবাদিক আজীবন সাংবাদিকতা করে গেলেও বৈষীযক স্বার্থ চিন্তায় তিনি ছিলেন একেবারেই উদাসীন। মানুষ মানবতা এবং পাহাড়ে সামাজিক অবস্থার উপর কাজ করাই তার একমাত্র নেশা এবং পেশা ছিল। তিনি মানব সৃষ্টির ইতিহাস, উপমহাদেশে সভ্যতার বিকাশ, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক বিকাশ-ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে তিনি প্রচুর গবেষনা করেন। এ বিষয়ে তার একাধিক পান্ডলিপি ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি পাহাড়ের ১১টি জাতিসত্ত্বার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর গবেষণা করে ১১টি পৃথক বইয়ের একটি সেট প্রকাশ করেন। পাহাড়ের বেসরকারি সংস্থা কপসেবা সংঘের উদ্যোগে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বের হওয়া এই প্রকাশনাটি পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির জন্য একটি সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে রাঙামাটি জেলার আলোচিত শহীদ মনোরঞ্জন দে এর জ্যেষ্ঠপূত্র শৈলেন দে ৮০র দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পেশাগত জীবনে তিনি যেমন ছিলেন আন্তরিক ও দক্ষ তেমনি পেশার উন্নয়ন এবং নীতির প্রয়োগে তিনি ছিলেন একজন অটল ও দৃঢ়চেতা সাংবাদিক। তিনি দৈনিক আজাদী ও ভোরের কাগজের রাঙামাটি প্রতিনিধি হিসেবে র্দীঘ সময় কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া দৈনিক গিরিদর্পণ, সাপ্তাহিক বনভূমি এবং দৈনিক রাঙামাটিতে তিনি তার পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সর্বশেষ দৈনিক রাঙামাটির বার্তা সম্পাদক পদে ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি পাহাড়ের বেশ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় গবেষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পাহাড়ে বহ সাংবাদিকের গুরু শৈলেন দে, সমাজ দর্শন এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা ও পড়াশুনা করতেন। মুক্তিদ্ধুক্তে অকালে বাবাকে হারানো শৈলেন দে পরিবারের জেষ্ঠ্য সন্তান হিসেবে অল্প বয়সেই সংসারের ঘানি ঘাড়ে তুলে নিতে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানিকভাবে সে সুযোগ না হলেও তিনি নিজ প্রচেষ্টায় সাহিত্য, সাংবাদিক, সমাজ, দর্শন এবং ধর্ম বিষয়ে কল্পনাতীত বুৎপত্তি অর্জন করেন।
তাঁর অকাল প্রয়াণের খবর রাঙামাটি শহরের ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর বাসভবন ও হাসপাতালে ছুটে যান। সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাবেক সিভিল সার্জন সুপ্রিয় বড়–য়াসহ রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তার বাসায় ভিড় জমান।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আসামবস্তি মহাশ্মশ্মানে তার মরদেহের সৎকার কাজ অনুষ্ঠিত হবে। মাত্র ৫৭ বছর বয়সে পরপারে চলে যাওয়া এই কবি সাংবাদিক মৃত্যুর সময় এক ছেলে এক মেয়ে, স্ত্রী, মা, ভাইবোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যু রাঙামিাটিতে কর্মরত সকল সংবাদকর্মী বিশেষ করে দৈনিক রাঙামাটি পরিবার বিশেষভাবে শোকাহত। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও সদগতি প্রত্যাশা করি।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 371 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen