শিরোনামঃ

জুম চাষ নিয়ে পার্বত্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উপর গুরুত্বরোপ

পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসন বিধিমালায় জুমচাষ সর্ম্পকিত পরামর্শ সভা

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেছেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতি নির্ভর জুমচাষ এর Photo 1গুরুত্বকে বিবেচনায় এনে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিমালার জুমচাষ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধি ৪১ ও ৪২ পরিবর্তন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট এ সংক্রান্ত ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ সংক্রান্ত আইনের পরিবর্তন এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এবং তিন জেলার জেলা প্রশাসনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে।

বুধবার দুপুরে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মিনি কনফারেন্স রুমে জুমচাষ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পরামর্শ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এবং তিন জেলার জেলা প্রশাসনগুলি সরকারের এক একটি অংশ। মানুষের দোর গোড়ায় সেবা পৌছানোর জন্য সবাইকে আইনের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে জুমচাষ পরিষদসমূহে হস্তান্তর করা হয়েছে। জুমচাষ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবন ধারণের একমাত্র অবলম্বন। এ জুমচাষকে আরও আধুনিক উপায়ে কিভাবে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যবহার করা যায় এ নিয়ে সমাজবিদ এবং গবেষকদের ভাবতে হবে। তিনি জুমচাষের পাশাপাশি মিশ্র ফলবাগানের প্রতি নজর দেয়ার জন্য আহ্বান রাখেন।

পরামর্শসভায় চাকমা সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষে নির্বাহী কর্মকর্তা মনীষ চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইরফান শরীফ, জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, পরিষদের সদস্য অংসুইপ্র“ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা, ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ এর কর্মকর্তাসহ রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন মৌজার ১৩জন মৌজা হেডম্যান উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত বক্তারা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। তারা বলেন, আইনের ধারা পরিবর্তনের ফলে এখন হতে জুমচাষ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা পরিষদের ওপর ন্যন্ত হয়েছে। হেডম্যানদেরকে তৌজি হালনাগাদ করে সার্কেল চীফের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের (পূর্বে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হতো) বরাবরে প্রেরণ করতে হবে। জুমচাষ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের অনুলিপি জেলা প্রশাসনের রেকর্ড শাখা এবং সার্কেল অফিস হতে সংগ্রহ করতে হবে। নতুন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন হতে হেডম্যানদেরকে তাদের পরিবর্তিত দায়িত্ব সম্পর্কে পত্রের মাধ্যমে জানানো হবে। জুম কর বা খাজনা সম্পর্কে এ বিষয়ে সরকারি পুনরাদেশ না আসা পর্যন্ত পূর্বের ন্যায় খাজনা আদায় এবং বন্টন হবে। জুমচাষ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল বিষয় সমন্বয় সাধনের জন্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি প্রবিধান প্রণয়নের জন্য সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া হেডম্যানরা প্রত্যেক মৌজায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভুমি মৌজা বন হিসাবে রাখার জন্য প্রস্তাব রাখেন।Photo 2

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং পরবর্তীতে সংশোধিত পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনের কার্যাবলীতে ‘জুমচাষ’ একটি অন্যতম বিষয় হিসেবে সংযুক্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১ ও ৪২ ধারা অনুযায়ী ‘জুমচাষ’ সম্পর্কিত বিধানে তিন পার্বত্য জেলার ‘জুমচাষ’ সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম ডেপুটি কমিশনারের নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের কার্যাবলীতে ‘জুমচাষ’ একটি বিষয় হিসাবে সংযুক্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিমালায় উল্লেখিত ৪১ ও ৪২ ধারা বলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত ‘জুমচাষ’ এর ওপর পার্বত্য জেলা পরিষদগুলির কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
২০১৩ সালের ৮ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে এবং ২০১৩ সালের ২৫শে এপ্রিল একই মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপন মূলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিমালার ‘জুমচাষ’ সংক্রান্ত ৪১ ও ৪২ ধারায় বিদ্যমান ‘ডেপুটি কমিশনার’ শব্দটির পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের ‘চেয়ারম্যান’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হবে বলে নির্দেশনা জারি করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,473 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen