সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধব্বস ও ঝুলন্ত সেতু দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকায় পর্যটক শুন্য ছিল পর্যটন শহর রাঙামাটি। পাহাড় ধব্বসের কারনে পর্যটকরা আতংকিত থাকায় তেমন পর্যটক সমাগম ছিল না রাঙামাটিতে। এমাসের শুরু এবং সরকারি নানা বন্ধে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠছে পর্যটন শহর রাঙামাটি। ঢাকা, চট্টগ্রামামসহ দেশ বিদেশের ভ্রমন পিপাসুরা পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় জমিয়েছে পর্যটন শহর রাঙামাটিতে। শহরের হোটেল মোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে
পাহাড় ধ্বসের পর ভয়ে আতঙ্কে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল পর্যটন শহর রাঙামাটি। বেশ কয়েক মাস লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। হতাশ হয়ে পড়েছিল পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শীতের ভরা পর্যটন মৌসুমে হঠাৎ পাহাড় ধ্বসের বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পাহাড়ের পর্যটন শিল্প রাঙামাটি। শীত যেন আশির্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য। শীতের আগমনে বদলাতে শুরু করেছে রাঙামাটির জনশূন্য পর্যটন স্পটগুলোর চিত্র। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের আনাগোনা বেড়েছে রাঙামাটির দর্শনীয় স্থানগুলোতে। ধস কাটিয়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে পাহাড়ের অর্থনীতিও। ভরা পর্যটন মৌসুমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর লীলাভুমি রাঙামাটিতে বেড়ানোর জন্য দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারো পর্যটক।
সরকারি বন্ধ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ বন্ধের কারনেও বিনোদনের খোঁজে পাহাড়ে আসা পর্যটকদের আনন্দ আর উচ্চলতা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ভূলিয়ে দিচ্ছে জীবনের নানা জটিলতা। শত শত পর্যটকের উচ্ছাস আর আনন্দে মুখরিত পর্যটন শহর রাঙামাটি। সরকারি বন্ধে শহরের পর্যটন স্পট রাঙামাটি জেলার নয়নাভিরাম বিশাল কাপ্তাই হ্রদ, সুবলং প্রাকৃতিক ঝর্ণা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতি সৌধ, পর্যটন মোটেল, ঝুলন্ত ব্রীজ, কাপ্তাই বাঁধ, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যাণ, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট, উপজাতীয় যাদুঘর, জেলা প্রশাসকের বাংলো, ঐতিহ্যবাহী জুম্ম ক্ষেতসহ অসংখ্য আদিবাসী গ্রাম এবং আদিবাসীদের বৈচিত্রপূর্ণ বর্ণাঢ্য জীবনধারা, কৃষ্টি,সংস্কৃতি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন শত শত পর্যটক। শহরের প্রাইভেট হোটেলগুলো এবং সরকারী পর্যটন কমপ্লেক্সের রুমের বুকিং ভালো বলে জানিয়েছেন পর্যটন কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পর্যটকরা রাঙামাটি বেড়াতে এসে তাদের ভালো লাগা এবং সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা থেকে বেড়াতে কবির হোসেন জানান, বাচ্ছাদের পরীক্ষা শেষ স্কুল বন্ধ তাই ঘুরতে আসলাম রাঙামাটি খুব সুন্দর ভালো লাগছে, তবে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় বাচ্ছারা খেলাধুলা করতে পারছে না, পর্যটন এলাকায় ভালো হোটেল নেই, আর পর্যটনের হোটেল দাম চড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখা প্রয়োজন।
রাজশাহী থেকে বেড়াতে কামরুল হাসান জানান, আমি এর আগেও এসেছি, কোন পরিবর্তন হয়নি। পর্যটকদের জন্য নতুন নতুন স্পট তৈরি করা প্রয়োজন। ঝুলন্ত ব্রীজটি পানি থেকে জেগে উঠার পর কর্তৃপক্ষ সংস্কার না করায় কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখা যাচ্ছে। ভালো মানের হোটেল নেই, খাবারের দাম বেশী কিন্তু খাবার মান সম্মত নয়। শিশুদের খেলার জন্য খোলামেলা পার্ক দরকার।
রাঙামাটি শহরের রির্জাভবাজার এলাকার হোটেল মতি মহলের মালিক শফিউল আজম জানান, তাদের বুকিং ভালো, তবে জানিয়েছেন ঝুলন্ত সেতু সংস্কারসহ পর্যটন স্পট বৃদ্ধি করার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে নতুন নতুন পর্যটন গড়ে উঠলেও রাঙামাটিতে লেক আর ঝুলন্ত সেতু ছাড়া কিছু নেই, পর্যটকরা এসে হতাশ হয়ে পড়েন।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর জানিয়েছেন, পাহাড় ধব্বসের পর পর্যটক ছিল না, এখন পর্যটকের ঢল নেমেছে, আশা করছি আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। তিনি আরো জানান, থার্টি ফাষ্ট নাইটে পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যেগে কোন অনুষ্ঠান নেই, তবে পর্যটকরা কেউ অনুষ্ঠান করতে চাইলে নিজস্ব উদ্যেগে করতে পারবেন।
প্রতিবছর পানি থেকে জেগে উঠার পর ঝুলন্ত সেতুকে রং লাগিয়ে সংস্কার করা হলেও এবার কেন করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি, তবে সংস্কার করা হবে।
সারা বছর রাঙামাটির পর্যটনকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আরো বেশী আকর্ষনীয় করতে পর্যটন স্পটগুলোর সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ আকর্ষণীয় করা গেলে একদিকে প্রচুর পর্যটকদের আগমন ঘটবে তেমনি করে অর্থনীতিতে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।