জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে রাঙ্গামাটির জেলেদের চাল দেয়া হচ্ছে তা ওজনে কম । ২০ কেজির স্থলে দেয়া হচ্ছে কয়েক কেজি কম । এই অভিযোগ রাঙ্গামাটির ভিজিএফ কার্ড ধারী জেলেদের যারা চাল সংগ্রহ করেছেন । আর তাদের এই অভিযোগটি যদি সত্যি হয় তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাস্কর । খাদ্যশষ্য বিতরনের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের এবং এবং কার্ডের চাল বিতরনের সাথে সম্পৃক্তদের মন মানসিকতার কতটুকু অধঃপতন ঘটলে জেলেদের ২০ কেজি চাল থেকেও ৩ হতে ৪ কেজি চাল আতœসাৎ করতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্যি দুঃখজনক ।
কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে বিগত বছর সাতেক আগে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এবং তৎকালীন জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয় এবং খাদ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীদের সদিচ্ছার কারনে এই বিশেষ ভিজিএফ কার্ড বিতরন কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর জেলেদের জন্য এইসব ভিজিএফ কার্ড এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । গত ২০১৪ সালের মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে এই কার্ডের সংখ্যা ১৮ হাজারের অধিক (১৮,৯৬০টি)কার্ড ইস্যু করা হয় । এবছর ও এই কার্ডের পরিমান ১৮ হাজের ও অধিক। প্রথমে কার্ড প্রতি ১০ কেজি করে চাল দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে।
জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ কার্ড ইস্যুর পর থেকে প্রতি বছর মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমের শুরুতেই অনাড়ম্বপুর্ণ অনুষ্ঠানে জেলা মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন জেলেদের মাঝে চাল বিতরন কর্মসূচী করে আসলেও এ বছর এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। রহস্যজনক কারনে এবার চাল বিতরনের কোন আনুষ্ঠানিক বা অনুষ্ঠানই করা হয়নি। চলতি মাছ মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদ হতে আহরিত মৎস্য সম্পদের উপর রেকর্ড সংখ্যক রয়েলটি আদায়ের খবর মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে ফলাও করে প্রচার করা হলেও জেলেদের মাঝে চাল বিতরনের আনুষ্ঠানিকতা এবছর কেন বাদ দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে এটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরশনের গোয়ার্তুমি ছাড়া আর কিছু না । যেখানে হ্রদ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করা হচ্ছে সেখানে চাল বিতরনের মতো একটি ধারাবাহিক কর্মসূচী বাদ দেয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এবছর মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে শুরু থেকেই কিছুটা নয় ছয় অবস্থা বিরাজ করছিল। অন্যান্য বছর মাছ ধরা বন্ধ মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ কার্ড এর চাল বিতরন কার্যক্রম শুরু হলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। আর এতে দূর্ভোগে পড়েছে এই সব দরিদ্র জেলেরা। ১৮ মে মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরন নিষিদ্ধ করা হলেও জুন মাসের ৩০ তারিখ জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের প্রথম মাসের চাল বরাদ্দ আসে রাঙ্গামাটি জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে । অর্থ্যাৎ ১ প্রায় দেড় মাস পর কার্ডের বিপরীতে চাল বরাদ্দ আসলেও তা আবার ১ মাসের জন্য। বাকী ২ মাসের চাল কখন বরাদ্দ আসবে সে নিয়েও এখন জেলেদের মাঝে সন্দেহের সৃষ্ঠি হয়েছে।
রাঙ্গামাটির বিক্ষুদ্ধ জেলেরা যে অভিযোগে রাস্তায় নেমেছেন সেই অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। চলতি মৌসুমে প্রথম মাসের চাল হতে ৩ হতে ৪ কেজি কম পাওয়ার পাশাপাশি তাদের অভিযোগ গত মৌসুমেও তারা ৩ মাসের জায়গায় দুই মাসের ভিজিএফ কার্ড পেয়েছে এবং এখান থেকেও ৫ কেজি করে চাল কম দেয়া হয়েছে। এর আগেও জেলেদের ভিজিএফ কার্ড এর বিপরীতে কম চাল পাওয়ার অভিযোগ উঠলেও এবারই প্রথম অসহায় এই জেলেরা রাস্তায় নেমেছেন। কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্ভরশীল অতি দরিদ্র জেলেরা যাতে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকেন এবং এই সময় তারা যাতে নূন্যতম দু মুঠো ভাত খেতে পারেন সেজন্যই এই ভিজিএফ কার্ড চালু করা হয়েছিল। আর এর সুফল ও পাওয়া গেছ বিগত মাছ ধরা বন্ধ মৌসুম গুলোতে । কমে এসেছে অবৈধভাবে মাছ শিকারের তৎপরতা। কিন্ত এই অসহায় জেলেদের প্রতি নির্মম আচরন কি তাদের সরল বিশ্বাসে আঘাত দেয়া নয় কি ?ু
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের কর্তা ব্যক্তিরা এবছর কাপ্তাই হ্রদ হতে রেকর্ড সংখ্যক রয়েলটি আদায় করতে পেরে মহা খুশিতে আছেন অপর দিকে দরিদ্র জেলেরা যে কিভাবে দিনানিপাত করছেন সে দিকে তাদের খবর নেই। ভিজিএফ কার্ডের যারা চাল বিতরন করছেন তারা ও সুখে আছেন কেননা দরিদ্র জেলেদের চাল নিজের ভান্ডারে ভরছেন । আর সেই জেলেরা যারা কাপ্তাই হ্রদের প্রাণ তারা কেমন আছেন? মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কিখবাবে তারা দিন কাটাচ্ছেন ? সে দিকে কারো দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। সত্যি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ।
(লেখক : রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট)