শিরোনামঃ

রাঙামাটি

ছাত্রলীগের হামলায় ২ সাংবাদিকসহ আহত ৪, এসপি ওসি’র অপসারণ দাবি

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সরকারি দলের ক্ষোভ বিক্ষোভে হঠাৎ উত্তাল রাঙামাটি। তারা ক্ষুব্দ পুলিশের ওপর। চড়াও সাংবাদিকদের ওপর। মঙ্গলবার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে জেলা ছাত্রলীগ ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। ছাত্রলীগ নেতা সুপায়ন চাকমার ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ এবং বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদসহ এসপি ও কোতোয়ালি থানার ওসি’র অপসারণ দাবিতে এ হরতাল দেয় জেলা ছাত্রলীগ। এতে একাত্ম হন জেলা আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
হরতাল চলাকালে ছাত্রলীগের হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত দুই সাংবাদিক চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশ ও ঢাকার দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি এম কামাল উদ্দিন এবং দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধি সাইফুল বিন হাসানকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া হামলার শিকার অপর ব্যক্তি রাঙামাটি জেলা পরিষদের গাড়ি চালক রূপ কুমার ত্রিপুরা ও মরিচ ব্যবসায়ীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ নিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন তিন সংবাদকর্মী। সোমবার হামলার শিকার দৈনিক সমকাল পত্রিকা এবং একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধি সত্রং চাকমাও রঙঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাধা উপেক্ষা করে কর্তব্য পালন করায় এ তিন সাংবাদিক ছাত্রলীগের হাতে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন বলে জানান, আহত সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আহত সাংবাদিকদের দেখতে হাসপাতাল যান জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান। তিন সাংবাদিকের ওপর ছাত্রলীগের হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থার দাবি করেছেন, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ফোরামসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এদিকে মঙ্গলবার হরতালের কারণে সদরসহ জেলায় কোথাও কোনো রকম যান চলাচল করতে পারেনি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন লোকজন। আটকা পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। নির্ধারিত পরীক্ষা দিতে তাদেরকে কেন্দ্রে যেতে হয়েছে পায়ে হেঁটে দুর্ভোগ মোকাবিলা করে। দোকানপাটসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, বীমা খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি ও কাজকর্ম ফাঁকা।
হরতালের সমর্থনে মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের রিজার্ভবাজার, বনরূপা, তবলছড়ি, কলেজগেট, ভেদভেদীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ও স্থানে জোরালো পিকেটিং করতে দেখা গেছে। পিকেটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরপক্ষে পিকেটারদের পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ শহরজুড়ে পুলিশসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত টহল মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হরতাল চলাকালে সকাল দুপুর বিকালে শহরের বনরূপা, হ্যাপির মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ এবং হরতালকারীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকালে শেষের দিকে বনরূপা এলাকায় হরতাল উত্তর সমাবেশে মিলিত হওয়ার সময় আরেক দফায় পুলিশ-হরতালকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গিয়ে তাদের ওপর সমাবেশের ভেতর থেকে অতর্কিত হামলা চালায় উৎশৃঙ্খল কয়েক ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া হরতালে আর কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে সোমবার উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মুখোমুখি সরকারি দল এবং পুলিশ। ঘটনার দায়ে রাঙামাটির এসপি এবং কোতোয়ালি থানার ওসি’র অপসারণ দাবি করেছেন সরকারি দলের নেতারা। বর্তমানে শহরে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। জনমনে ছড়িয়েছে আতঙ্ক উৎকণ্ঠা। হরতাল সর্বাত্মক ও সফল বলে দাবি করেছে সরকারি দল।
হরতাল উত্তর সমাবেশ থেকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা অবিলম্বে রাঙ্গামাটির এসপি সাঈদ তারিকুল হাসান, এএসপি জাহাঙ্গীর ও কোতোয়ালি থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়াকে অপসারণ করার দাবি জানান। এজন্য ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করে অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাকে প্রত্যাহার বা অপসারণ দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। সরকার যা ভালো মনে করে তাই হবে। ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন, এএসপি (সদর সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম ও কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার লিমন বোসসহ পুলিশে ৭-৮ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান, কোতোয়ালি থানার ওসি সত্যজিৎ বড়–য়া। তার অপসারণের দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওসি।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যার দিকে শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা সুপায়ন চাকমাকে কুপিয়ে আহত করে একদল দুর্বৃত্ত। সুপায়নকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সঙ্গে সঙ্গে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জেলা ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকারে রূপ নিলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। এতে পুলিশ এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়াসহ ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ২০-৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিসহ, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অপরপক্ষে পুলিশের ওপর লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশের হামলায় তাদের ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 264 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen