শিরোনামঃ

চাকমা রাণীর উপর হামলার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিনী রাণী য়েন য়েন রায়ের উপর হামলা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে, রাঙামাটির নাগরিক সমাজ। শুক্রবার বিকালে শহরের রাজবাড়ির ‘সাবারাং’ নামে স্থানীয় এক রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নাগরিক সমাজের ব্যানারে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি, হেডম্যান নেটওয়ার্ক, কার্বারি নেটওয়ার্ক, হিমাওয়ান্তি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনটি করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। এ সময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, প্রফেসর মংসানু চৌধুরী, নারীনেত্রী টুকু তালুকদার, আইনজীবী সুস্মিতা চাকমাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে কয়েক নারী ভোলান্টিয়ারসহ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিনী য়েন য়েন রায়ের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এতে রাণীসহ কয়েকজন আহত হয়। রাণী ওই সময়ে বিলাইছড়িতে যৌন হয়রানির শিকার দুই মারমা তরুণীর সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে বলা হয়, ২২ জানুয়ারি রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের অরাছড়ি নামক গ্রামে দুই মারমা তরুণীর একজনকে ধর্ষণ এবং অপরজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এতে ২৩ জানুয়ারি গ্রামবাসীর সহায়তায় চিকিৎসার জন্য ওই দুই মারমা তরুণীকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে ভূক্তভোগী দুই তরুণীকে সেখানে একটি কক্ষে পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কড়া প্রহরায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ অবস্থায় তরুণীদের মানসিক মনোবল ফিরিয়ে আনতে রাণী য়েন য়েনসহ কয়েকজন নারী ভোলান্টিয়ার তাদের সহায়তা দিয়ে আসছিলেন।
সেখান থেকে হাইকোর্টের এক আদেশ মোতাবেক ভূক্তভোগীগের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে বাবা, মা’র হেফাজতে দেয়ার কথা বলে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে নারীরা ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা এবং পুরুষরা মাস্কপরা অবস্থায় অংশ নেন, যাদের মধ্যে ইউনিফর্মধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ হামলার ঘটনায় স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও যথাযথ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন, জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা, ভূক্তভোগী দুই মারমা তরুণীর বর্তমান অবস্থান নিরূপণ করে তার একটি সুস্পষ্ট প্রতিবেদন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে প্রেরণ, দুই মারমা তরুণীসহ তাদের পরিবার এবং চাকমা রাজ পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সুত্রে জানা যায়, ২২ জানুয়ারী ধর্ষনের অভিযোগ এনে দুই মারমা তরুনীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষনের আলামত না থাকলেও একটি আঞ্চলিক দলের প্ররোচনায় চাকমা সার্কেলের রাণী ইয়েন ইয়েন পিসিপির ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে দুই বোনকে রাণীর হেফাজতে নেয়ার কথা বলে পাহাড়ের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এক পর্যায়ে মেয়ের বাবা নিজেদের সন্তানকে নিজেদের হেফাজতে নিতে ১১ ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টে রিট পিটিশন (নং ২১৮৬/২০১৮) দায়ের করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদ এর আদালত শুনানী শেষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী এক আদেশে কিশোরীদের তাদের বাবা মার হেফাজতে দিতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন কিশোরীদের বাবা মা’র কাছে বুঝিয়ে দিতে গেলে সেখানে রাণী আদালতের আদেশকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের কাজে বাধা প্রদান করেন এবং আবারো নিজের হেফাজতে নেয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান কিশোরীদের বাবা মা’র কাছে সন্তানদের বুঝিয়ে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 367 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen