সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় সম্প্রতি দুবৃর্ত্তদের গুলিতে আহত হাতিটির চিকিৎসা করছে বনবিভাগ ও চট্টগ্রাম ভেটেনারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। দীর্ঘ ১২ দিনেও হাতিটি খাবার গ্রহন না করায় উদ্বিগ্ন বনবিভাগ ও চিকিৎসকরা। তবে তাকে বাচিয়ে রাখতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আ্যন্টি বায়েটিক ও স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ও বনবিভাগের আশা খুব দ্রুত বন্য হাতিটি সুস্থ্য হয়ে আবার বনে ফিরে যাবে।
গত ২২ অক্টোবর কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার হাতিটিকে গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা ডাক্তারসহ বনবিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, প্রথমে হাতিটির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখমের চিহ্ন সনাক্ত করা গেলে ও হাতিটি যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা প্রথমে কেউ বুঝতে পারেননি। হাতিটিকে ৪টি গুলি করা হলেও ২টি গুলি শরীরে লেগেছে। আহত হাতিটির প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কিছুটা উন্নতি হলে হাতির ঘাঁড় ও মাথায় গুলির চিহ্নটি দেখতে পান চিকিৎসকরা। বর্তমানে গুলিবিদ্ধ হাতিটির কাপ্তাই হ্রদের শুকনাছড়ি বিটে চিকিৎসা চলছে।
ইতিমধ্যে হাতির চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম ভেটেনারী বিশ্ব-বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন ও সার্জারী বিভাগ) ড.ভজন চন্দ্র দাসকে আহবায়ক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ সামশুল আজমকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসাইন, চট্টগ্রাম ভেটেনারী বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক ভেটেনারী সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।
রাইংখিয়ং মুখ বনবিভাগ শুল্ক ও পরীক্ষন ষ্টেশন ও কর্ণফুলী রেঞ্জ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ শরীফুল আলম জানান, ২২ অক্টোবর তারিখ খুব খারাপ অবস্থায় হাতিটিকে কাপ্তাই লেক থেকে উদ্ধার করা হয়। তখন হাতিটি প্রায় অজ্ঞান অবস্থায়ই ছিল। বনবিভাগের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং চিকিৎসাসেবার কারনে বর্তমানে আগের তুলনায় হাতিটির অবস্থার অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে হাতি যদি খাবার না খায় তাহলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে হাতিটির খাওয়া বন্ধ থাকার কারনে দৈনিক তাকে ১২-১৫টি স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
হাতির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মাহুত বাবুল জানান, হাতিটি উদ্ধারের পর থেকে খাওয়া দাওয়া অনেকটাই বন্ধ রেখেছে । তিনি বলেন, শরীরে গুলি থাকাতে হাতিটি দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে।
হাতির চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও মেডিকেল টিমের সদস্য সচিব মোঃ সামশুল আজম জানান, আগের তুলনায় হাতি এখন অনেকটা ভালো। তিনি বলেন, হাতি গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বনবিভাগ ও চিকিৎসকরা পরে বুঝতে পারে। হাতির মাথায় ও ঘাঁড়ে গুলি লেগে তা অনেকটা শরীরের ভেতরে প্রবেশ করাতে গুলিগুলো বের করা একটু কঠিন বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তবে গুলি যাতে বের হয়ে যায় সেজন্য মেডিকেল টিম উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে ও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাতিটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, গুলি কারা করেছে কেন করেছে আমরা তা বের করার চেষ্টা করছি। দোষীদের বের করতে পারলে তাদের বন আইনে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি আরো বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করাসহ তাদের রক্ষার্থে কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম কাজ করছে।
বর্তমানে হাতিটির চিকিৎসা সেবা দিতে খুলনা থেকে আসা ভেটেনারী সার্জন ডা. সাঈদ হোসেন জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়াতে শরীরের ব্যাথায় হাতির নড়াচড়া করতে কষ্ট পাচ্ছে। তাই খাওয়ার খাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এ্যান্টিবায়েটিক এবং ঔষুধ দিয়ে হাতিটিকে তার আবাস স্থলে ফিরিয়ে দিতে।
তিনি আরো জানান, গুলি বের করার মত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কোন সার্জারি এখনো বাংলাদেশে নেই। শরীরে গুলি থাকায় তা যেন হাতিটিকে আর দুর্বল করতে না পারে সেজন্য গঠিত মেডিকেল টিমের সাথে আলোচনা করে সকলের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হাতির চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের কলমিছড়া বিট এলাকা থেকে বন বিভাগ কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় অসুস্থ বন্যহাতি উদ্ধার করে। গত ২২ অক্টোবর বুধবার রাতে উদ্ধার করা অসুস্থ হাতিটির বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের শুকনাছড়ি বিট এলাকায় চিকিৎসা চলছে।
পরিবেশবাদী ও সাধারন মানুষদের আশা আহত হাতিটি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে এবং ফিরে যাবে তার আবাস স্থলে। যারা বন দুস্য বা শিকারী তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটায়।