শিরোনামঃ

কাল ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। কাল রোববার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্প আইসিডিপির পাড়াকেন্দ্রের ৪০০০তম পাড়াকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হোটেল সোনারগাও থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাপ্তাই ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়িতে ৪০০০তম পাড়া কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং, পার্বত্য মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোক্তাদির চৌধুরী এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। অন্যদিকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পাড়াকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, ফিরোজা বেগম চিনু এমপি এবং সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।

উল্লেখ্য, পার্বত্যাঞ্চলের মহিলা ও শিশুদের মৃত্যুহার রোধ, পুষ্টিমান উন্নয়ন, সুপেয় পানি সরবরাহ, শিশু শিক্ষা, প্রাক-শৈশব উন্নয়ন, শিশু সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সম্মত পয়ঃব্যবস্থা উন্নয়ন ও কমিউনিটি সক্ষমতা উন্নয়ন এবং আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার হার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইউনিসেফের সহায়তায় সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান প্রকল্পটি ৩ পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ১১৯টি ইউনিয়নের ৩৫১৯টি গ্রামের ১,৬৫,০০০টি পরিবারের জন্য (যাদের ৭০% উপজাতীয় সম্প্রদায়) মৌলিক সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে এ্যাকশান রিচার্জ হিসাবে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি ১৯৮৫-১৯৯৫ মেয়াদে প্রথম পর্যায়, ১৯৯৬-২০১১ মেয়াদে দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২০১২-২০১৭ মেয়াদে ৩য় পর্যায় বাস্তবায়ন করা হয়।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও অন্যান্য মৌল সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফ একটি বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৩৮০০ পাড়াকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে ১,৬৫,০০০ পরিবারের ৭,৭২,৬০০ জনগোষ্ঠিকে সরকারী/বেসরকারী মৌল সেবা প্রবাহের সাথে সম্পৃক্তকরণ, ৬৪২৬ জন যুবাকে কম্যুনিটি সংগঠন, প্রাক-শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, পুষ্টি উন্নয়ন, হাইজিন প্রমোশন বিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে স্থানীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য একটি কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা, দুই লক্ষ্যেরও বেশি শিশুকে ২ বছর মেয়াদী প্রাক-শিক্ষা কোর্স সম্পন্ন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিকরণ, ৪টি আবাসিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষা সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সমূহের ১১৩৬ জন শিক্ষার্থীকে খাদ্য, পোষাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা উপকরণ সুবিধা প্রদান করে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান, ১,৬৫,০০০ পরিবারের ৯০% উপযুক্ত শিশু ও ৮৬% মহিলাকে টিকার আওতায় আনা, ৬-৩৫ মাস বয়সী কিশোরী, স্তন্যদানকারী মা, গর্ভবতী মহিলা ও নববিবাহিতা মহিলাদের মধ্যে যথাক্রমে ভিটামিন মিনারেল পাউডার, আয়রন ফোলেট টেবলেট, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও ক্রিমিনাশক বড়ি বিতরনের মাধ্যমে এনিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করা, ২৯,০০০ শিশুকে নিয়মিতভাবে উচ্চ ক্যালরীযুক্ত বিস্কুট খাওয়ানো, ৩৮৯টি নলকূপ স্থাপন ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে ৯৭৩০ সেট স্বল্পব্যয়ী লেট্রিন বিতরণ, ৮০টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশান স্থাপন, ১০০ ভাগ প্রি-স্কুল শিক্ষার্থী জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার হার সম্প্রসারণ, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, পানি ও পয়: ব্যব্সথা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সর্বোপরি মৌল সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে পার্বত্যাঞ্চলের পশ্চাদপদতা দূরীকরণে সরকারী উদ্যোগ অনেকাংশে সফল হয়েছে।
এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৫৭ কোটি টাকা এবং দাতা সংস্থা ইউনিসেফ ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বরাদ্দের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার এবং অনুমোদিত বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে ইউনিসেফ অর্থ ছাড় করে।

৪০০০তম পাড়াকেন্দ্রের মাইলফলক অর্জন :
কাল রোববার ২১ ২০০টি নতুন পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে আইসিডিপি দীর্ঘ প্রত্যাশিত ৪০০০ পাড়াকেন্দ্রের মাইলফলক স্পর্শ করবে। এর মাধ্যমে আইসিডিপি ৩ পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ১১৯টি ইউনিয়নে ৩৫৬২ গ্রামে পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ১,৭৬,১২৯ পরিবারের ৮,৮৯,২৮৪ জনকে মৌল সেবা প্রবাহের সাথে যুক্ত করবে। ৪০০০ পাড়াকেন্দ্র স্থাপন পার্বত্যবাসীদের জন্য একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা। এসব পাড়াকেন্দ্র পার্বত্যবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি একটি বুদ্ধিদীপ্ত প্রজন্ম বিনির্মানে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৪০০০ পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের এই যুগান্তকারী কর্মসূচী উদ্বোধন করা হলে প্রত্যন্ত এই পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সমূহের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে এবং এ অঞ্চলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 781 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen