সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সময়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে। চুক্তির কিছু ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, আর কিছু হয়নি। তিনি বলেন, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন যে কোন সময় চুক্তির অন্যান্য বিষয় নিশ্চয় বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরো বলেন, শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে এক শ্রেণী রয়েছে, যারা সবসময় বিরোধীতা করেন। তাই আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে আগামীতে কাদের হাতে ক্ষমতা থাকলে চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি এগিয়ে যাবে আর যাবে না। তিনি আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন, বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তথ্যমন্ত্রী শনিবার মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এক স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধু পাহাড়ের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন অবিসংবাদী নেতা। তিনি এতটাই প্রগতিশীল ছিলেন যে ৩০ বছর আগে শ্রমজীবী, মেহনতী মানুষের কথা বলে গেছেন। তাই তাকে শুধু একটি স্থানের একটি অঞ্চলের নেতা বলা যায় না, একই সাথে তাঁকে জাতীয় নেতাও বলা যায়। তিনি আরো বলেন, তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলে গেছেন, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বাদ পড়া আদিবাসীদের তালিকা সংশোধনের কাজ হাতে নিয়েছে এবং আজ হোক কাল সেটি সংশোধিত হবে।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা জাতীয় কমিটি এই স্মরন সভার আয়োজন করে। কমিটির আহ্বায়ক নুমান আহম্মদ খান এর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার ও জাতীয় কমিটির ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস। সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পুলিট ব্যুরো সদস্য বিমল বিশ্বাস, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহ আলম, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, অভিনেত্রী ও সংস্কৃতি কর্মী রোকেয়া প্রাচীসহ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব দীপায়ন খীসা। এম এন লারমার স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন আদিবাসী কালচারাল ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রা ত্রিপুরা এবং সংস্কৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন-সমগীত, মাদল গানের দলসহ প্রমুখ সংগঠন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আজ শুধু আদিবাসীরাই নয়, দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠী যারা বিভিন্ন কারণে সংখ্যালঘু তারা স্বাধীনতা বিরোধী এক চক্রের হাতে বারবার আক্রমনের শিকার হচ্ছে। তাই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামীর বাংলাদেশ আমরা কেমন চাই। তিনি আরো বলেন, এম এন লারমা যে স্বপ্ন দেখে গিয়েছেন ৩০ বছর আগে, সেই স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জাতীয় কমিটির রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়টিকে ‘এম এন লারমা মহাসড়ক’ নাম করন, ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে লারমার ভাষ্কর্য নির্মাণ এবং জাতীয় শিক্ষা পাঠক্রমে এম এন লারমার জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানিয়েছে।