সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আমেরিকান ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন কট্টর ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানের প্রধান হাকিমুল্লাহ মেহসুদ। শুক্রবার আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। আর হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে শনিবার সকালে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের অজ্ঞাত স্থানে দাফনও করা হয়েছে। নিহত অন্যদেরও ওয়াজিরিস্তানের ভিন্ন স্থানে কবর দেয়া হয়েছে। মেহসুদের সঙ্গে তার অন্যতম দুই সহযোগী আবদুল্লাহ বাহার মেহসুদ এবং তারিক মেহসুদসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। এদিকে মেহসুদ নিহত হওয়ার পর তালেবান খান সাইদ সাজনাকে তাদের নতুন নেতা নির্বাচন করেছে। এরপরই তারা ঘোষণা দিয়েছে, নেতা হত্যার জন্য নজিরবিহীন প্রতিশোধ নেয়া হবে। ফলে পাকিস্তানজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের দান্দের দারপাখেল নামক এলাকায় একটি মসজিদে বৈঠক শেষে ফেরার সময় ড্রোন হামলা করা হয়। হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আরো যারা নিহত হয়েছেন তাদের একজন সম্পর্কে হাকিমুল্লাহ মেহসুদের চাচা এবং একজন চাচাতো ভাই। শনিবার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তাদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, ডন, ওয়াশিংটন পোস্ট
উপজাতি অধ্যুষিত উত্তর ওয়াজিরস্তানের প্রধান শহর মিরামশাহের পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দান্দে দারপাখেল এলাকাটি পাকিস্তানি তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ঘটনার দিন শুক্রবার সকাল থেকেই ওই এলাকার অনেক নিচ দিয়ে একের পর এক ড্রোন উড়ে যাচ্ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। হাকিমুল্লাহ মেহসুদের মৃত্যুর পরদিন শনিবার ওই এলাকার ওপর দিয়ে যতগুলো ড্রোন উড়ে গেছে তালেবান জঙ্গিরা সেই ড্রোনগুলো লক্ষ্য করে ক্রোধে গুলিও চালিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানের তালেবান কমান্ডার আবু ওমর হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা এই ঘটনার নজিরবিহীন প্রতিশোধ নেব। শত্রুদের আমরা বেশ ভালোভাবেই চিনি।’ এছাড়া পাকিস্তান সরকার এই হামলার সঙ্গে জড়িত বলেই মনে করেন তিনি।
এদিকে পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে এই হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সব ধরনের ড্রোন হামলাই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে। তাই এই ধরনের হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি শুক্রবার রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের চলমান শান্তি আলোচনা বানচালের লক্ষ্যেই এ ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তালেবানের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে যখনই উদ্যোগ নেয়া হয়, তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে।’ ড্রোন হামলার কঠোর সমালোচক এবং পাকিস্তানের আরেক রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খানও এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সরকারের প্রতি দেশের মধ্য দিয়ে ন্যাটোর সব ধরনের রসদ চলাচল বন্ধ করে দেয়া দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৩৪ বছর বয়সী এই জঙ্গি নেতা হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে অদূর ভবিষ্যতে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের আলোচনার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মেহসুদ নিহত হওয়ার মাত্র একদিন আগেই পাকিস্তান সরকারের তিনজন প্রতিনিধি তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য উত্তর ওয়াজিরিস্তান যাবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
নতুন তালেবান প্রধান সাজনা
ড্রোন হামলায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদের মৃত্যুর পর শনিবার তেহরিক-ই-তালেবানের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এক অজ্ঞাত স্থানে সংস্থাটির শুরা সদস্যরা মিলিত হয়ে সংগঠনটির নতুন প্রধান হিসেবে খান সাইদ সাজনাকে নির্বাচিত করেন। তালেবান সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির শুরা বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ৬০ সদস্যের মধ্যে ৪৩ জনই সাজনার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। নতুন তালেবান প্রধান খান সাইদ সাজনা ২০১১ সালের মে মাসে করাচির নৌঘাঁটিতে হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া ২০১২ সালে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বান্নু শহরে জেল ভেঙে ৪০০ তালেবান জঙ্গিকে মুক্ত করার মূল পরিকল্পনাকারীও সাজনা ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ৩৬ বছর বয়সী এই তালেবান নেতার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এর আগে আফগানিস্তানেও যুদ্ধ করেছিলেন তিনি।