শিরোনামঃ

আদুরীর পর নির্যাতিত হলো বান্দরবানের মেছাইনু

রফিকুল আলম মামুন, সিএইচটি টুডে ডট কম,বান্দরবান।

রাজধানী ঢাকায় গৃহকর্তী কর্তৃক বাসার কাজের মেয়ে আদুরীর নির্যাতনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো নির্যাতিত হলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি গ্রামের কিশোরী মেছাইনো মার্মা।

ঢাকা থেকে চুল কাটা ন্যাড়া মাথা, গরম পানিতে ঝলসানো মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নানা ক্ষত চিহ্ন নিয়ে গত ৯ অক্টোবর ১২ বছরের কিশোরী কন্যা মেছাইনো মা উচম্যাকে নিয়ে অত্যাচারের বিচার চাইতে আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ জামিলের কাছে।

মায়ের কাছে মেয়ের ভয়াল অত্যাচারের কাহিনী অবাক করে দেয় সাংবাদিকসহ উপস্থিত সবাইকে।
মেছাইনোর মা উচম্যা জানান, প্রায় ৪ বছর আগে কক্্রবাজারের রামু উপজেলার মাছাইনো র্মামা নামের মধ্যবয়সী পূবপরিচিত এক মহিলা পড়ালেখা করার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে যায় গৃহকর্মী হিসেবে।

Picture23

রামুতে কিছুদিন রাখার পর মাছাইনো কিছুদিনের মধ্যেই পরিবারকে না জানিয়ে কিশোরী মেছাইনোকে নিয়ে যায় ঢাকার লালমাটিয়ায় থাকা মেয়ে উম্যা ও মেয়ে জামাই কি মং মার্মার কাছে। এ সংবাদ মা উচম্যা জানার পরও মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে কোন প্রতিবাদ করেনি।

মাঝে মধ্যে শুধু মোবাইল ফোনে মা মেয়ে কথা বলার সুযোগ হতো। বিভিন্ন সময় মাকে দেখতে বান্দরবান আসতে চাইলেও গৃহকর্তাদের নির্দয় আচরনে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এভাবে চলে যায় ৪ বছর। এরই মধ্যে ঘটে যায় কিশোরী মেছাইনোর জীবনের নিষ্ঠুরতম ঘটনাটি।

ঘটনা জানতে চাইলে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা ভাষায় উপজাতি কিশোরী মেছাইনো মার্মা সাংবাদিকদের জানায়, দিন তারিখ মনে না থাকলেও সেদিন সকালে গৃহকর্তী উম্যা মার্মার ৩ বছরের ছেলে মিনি বাইসাইকেল থেকে পড়ে সামান্য আঘাত পায়। এ ঘটনার দোষ এসে পড়ে আমার ঘাড়ে।

তার পর থেকেই শুরু হয় বিভিন্নভাবে অমানুষিক নির্যাতন। চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে মারধরের একপর্যায়ে উম্যা মার্মা গরম পানি ঢেলে দেয় শরীরে, তাতে মুখসহ হাতের একটি অংশ ঝলসে যায়। এক পর্যায়ে বাথরুমে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করি। সেখান থেকে ধরে এনে আমার লম্বা চুল কেটে দেয়া হয়। এতেও ক্ষান্ত হয়নি গৃহকর্তী, এক পর্যায়ে রান্নাঘরের খুন্তি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়, তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই।

একদিন চোখ খুলে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি। বেশকিছুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর সবার অগোচরে এক পর্যায়ে পালিয়ে হাসপাতালের পাশের একটি ঘরে আশ্রয় নেই। ঘরের লোকজন আমার কথা শুনে ৭ অক্টোবর আমাকে নাইক্ষ্যংছড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

কথাগুলো বলতে বলতে একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হতভাগ্য কিশোরী মেছাইনু।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ জামিল সি.এইচ.টি. টুডে কে বলেন, মেয়েটি এখনো অসুস্থ। নির্যাতনের বিষয়টি ভয়াবহ এবং কিছুটা পুরানো। অভিবাবকরা মেয়েটিকে আমার কাছে নিয়ে আসলেও ঘটনাস্থল ঢাকার মোহাম্মদপুর হওয়ায় সেখানে গিয়েই সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তবে দরিদ্র এই কিশোরীকে আইনী সহযোগিতা দিতে তিনি উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন বলেও সাংবাদিকদের জানান।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মেয়েটিকে চট্টগ্রামের একটি মেডিকেল সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 295 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen