সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেছেন, সরকার শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না এমন অভিযোগ করলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হবে, আমরা চুক্তি বাস্তবায়নে যতটা আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছি, আমাদের বন্ধুরা ততটা নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মত নয় যে কাপড় বানানোর ওয়ার্ডার দিলাম আর তিনদিন পরে এসে নিয়ে গেলাম। আমাদের দরকার আস্থা,স্থিতিশীল পরিস্থিতি কিন্তু আমরা দেখছি শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে নামে পার্বত্য এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, অবৈধ অস্ত্রের ঝনাঝনানি, চাদাবাজির কারনে মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, চলাচলের স্বাধীনতা নাই, ব্যবসা বাণিজ্যে করতে পারছে না. মানুষ কথা বলতে পারছে না তারা অবৈধ অস্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। অস্থিতিশীল পরিবেশ যদি বিরাজ করতে থাকে তাহলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করা কঠিন। সে জন্য আমরা বলেছি আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র সম্পুর্ণ উদ্ধার করতে হবে, স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে হবে তাহলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির দুই দশক পুর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিস্থ তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, আমরা কি কখনো বলেছি আমরা শতভাগ চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি, এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের পরে ইংল্যান্ডের সাথে নর্দান আয়ার ল্যান্ডের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, সেখানে পরিবেশ ছিল ভিন্ন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা এবং সেনা প্রধান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং সবাই ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। এই পরিবেশের কারনে তারা খুব আশাবাদী ছিল যে চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং ২০০০ সনের মধ্যে চুক্তি পুনাঙ্গ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো তারা রোডম্যাপ অনুযায়ী চুক্তির ৪০ শতাংশের বেশী বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমি একথা বলছি একারনে যারা রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বলছেন তাদের, রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই যে চুক্তি পুনাঙ্গ বাস্তবায়িত হয় না তার বড় প্রমাণ নর্দান আয়ার ল্যান্ড।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, গত ২০ বছরে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারি নাই এটা আমাদের জন্য যন্ত্রণার, সময় অনেকটা পেরিয়ে গেছে। আমরা কখনো বলি নাই চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেছি। আমরা কখনো বলি নাই ভুমি সমস্যার সমাধান হয়েছে , চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও পক্ষান্তরে আমরা দেখেছি অন্যপক্ষের নেতিবাচক মনোভাব বেশী কাজ করছে। সব সময় নেতিবাচক মনোভাব না দেখিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। আমি সেদিন ইন্টারনেট ঘেটে দেখেছি শান্তি চুক্তির ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছি।
আমরা দেখেছি আমাদের বন্ধুগন সব সময় চুক্তি বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়েছে, আমরা আন্তরিক ছিলাম বলে বিএনপির আমলেও শেষ পর্যন্ত আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম সংলাপ কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থেকেছি, কিন্তু বিএনপি আমাদের সময় সংলাপ কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়নি। বরং শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেণী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে, বাঙালীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চলে যেতে হবে এমন অভিযোগ তোলে হরতাল, লংমার্চ করেছিল। আমরা দেখলাম ২০০১ সালে নির্বাচনে আমাদের বন্ধুরা চুক্তি বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়েছে। বিএনপি জামাত জোট তো সরকারে ছিল তারা বলেছিল ক্ষমতায় আসলে চুক্তি বাতিল করবে কিন্তু তারা চুক্তি বাতিলও করেনি, আবার এক চুল পরিমানও বাস্তবায়ন করেনি, যা করেছে আওয়ামীলীগ করেছে। চুক্তি করেছি আমরা বাস্তবায়ন আমরাই করব।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, আমাদেরকে নেতিবাচক মনোভাব পরিহারের পাশাপাশি ইতিবাচক মনোভাব এগিয়ে আসতে হবে, উদ্ধার করতে অবৈধ অস্ত্র তাহলে চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাবে। চুক্তি বাস্তবায়ন অনেকাংশে হয়েছে বলে পার্বত্য মন্ত্রনালয় হয়েছে, আঞ্চলিক পরিষদ, টাস্কফোর্স হয়েছে, জেলা পরিষদ আইন সংশোধন হয়েছে, ভুমি কমিশন আইন হয়েছে। সন্তু লারমা বলছেন তার হাতে কোন ক্ষমতা নেই যদি নাই-ই থাকে তাহলে তিনি এনজিওগুলোর সাথে কিভাবে সমন্বয় করছেন, উপজেলায় পর্যায়ে ইউএনওদের সাথে খবরদারি করছেন, এছাড়া আঞ্চলিক পরিষদ তো পুরোটাই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাজগুলো দেখা শোনা করছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার যখন কোন উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়, তখন-ই তারা বিরোধীতা করে। যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করে সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^দ্যিালয় স্থাপনের কাজ হাতে নেয় এবং ক্লাশ শুরু করে আগামী ২বছর পর এখান থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বের হবে অথচ সেখানেও তাদের বাধা। যদি কোন সমস্যা থাকে সেটি আলোচনা করে সমাধান করা যেতে পারে, কিন্তু বিরোধীতার কারণে বিরোধীতা তারা করেই চলেছেন। তবে যে সব প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে সেগুলোর কাজ খুব দ্রুত শুরু করা হবে।
দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী অনেক অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে । কিন্তু সন্তু লারমা সব ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন, আমরা একদিকে দেখছি সন্তু লারমা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলছেন আবার অন্যদিকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গুন কীর্তন করছেন, আমরা কোনটাকে বিশ^াস করব।
দীপংকর তালুকদার আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তির বিষয়ে বলেন, এরা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। আমার উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও আতংকের মধ্যে আছি কারণ এরা একে অপরকে মুখোশ বাহিনী বলছে। মুখোশ পরে এরা কখন অপকর্ম করবে, কাকে মেরে ফেলে মুখোশবাহিনী করেছে বলে চালিয়ে দেয় এটা নিয়ে আমরা শংকিত। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে, কারো মতের সাথে মতের অমিল থাকতে পারে কিন্তু রাজনীতি হবে গনতান্ত্রিক উপায়ে। কিন্তু আঞ্চলিক দলগুলোর বিভক্তির মাধ্যমে যদি অবৈধ অস্ত্রের ঝনাঝনানি বেড়ে যায় তাহলে পাহাড় আবার অশান্ত হওয়ার আশংকা থেকেই যায়।