সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। প্রয়াত সাংবাদিক শৈলেন দে’র শোক সভায় বক্তারা বলেছেন, শৈলেন দে একজন নির্ভেজাল, নির্লোভ ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে
রাঙামাটির সাংবাদিক সমাজ শুধু একজন সাংবাদিকই নয় একজন অভিভাবকও হারিয়েছে। তিনি চাপা স্বভাবের শান্ত মানুষ ছিলেন নিজের কষ্ট কখনো অন্যকে বুঝতে দিতেন না। সৎ, সজ্জন ও একজন প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই নিজের অসুখের কথা কাউকে বুঝতে না দিয়ে বিনা চিকিৎসায় তিনি সহকর্মীদের ছেড়ে চির বিদায় হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রয়াত সাংবাদিক শৈলেন দে’র স্মরণে শোক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাঙামাটিতে কর্মরত সাংবাদিকরা এই শোক সভার আয়োজন করে।
শোক সভায় বক্তারা আরো বলেন, সংঘাত বিক্ষুব্ধ পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি আনায়নে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রয়াত সাংবাদিক শৈলেন দে যে অবদান রেখে গেছেন তা অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিশেষ করে প্রয়াত সাংবাদিক শৈলেন দে কর্মজীবনে পার্বত্য অঞ্চলে ১১ টি আদিবাসীর জনগোষ্ঠীর প্রথাগত আইনগুলো লিখিত আকারে বইয়ে লিপিবদ্ধ করে যে আইনী দলিল প্রনয়ন করে গেছেন তা পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক এ,কে,এম মকছুদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক সভায় বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল, পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুনীল কান্তি দে, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, রাঙামাটি রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়–য়া, বান্দরবান প্রেসক্লাবের মনিরুল ইসলাম মনু, পার্বত্য কন্ঠের সম্পাদক মোখলেসুর রহমান ভুইয়া, রাঙামাটি সাংবাদিক ফোরামের সাধারন সম্পাদক নন্দন দেবনাথ, রাঙামাটি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক সোলায়মান, খাগড়াছড়ির অরন্য বার্তা সম্পাদক চৌধুরী আতাউর রহমান রানা, দৈনিক রাঙামাটির সম্পাদক আনোয়ার আল হক, শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স ম মঈনুদ্দীন, কপো সেবা সংঘের কর্মকর্তা যোসেশ্বর চাকমা বিল্টু, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অঞ্জুন দে, পুজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি বিজয় রতন দে এবং প্রয়াত শৈলেন দে’র ছোটভাই শৈরেন দে বক্তব্য রাখেন।
শোক সভায় বক্তারা আরো বলেন, শৈলেন দে শুধু একজন সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি বহু প্রতিভার অধিকারী। গান লিখতেন, কবিতা লিখতেন এমনকি মাঝে মধ্যে অভিনয়ও করেছেন। তিনি বেচে থাকবেন কর্মের কারনে মানুষের মধ্যে।
শোক সভায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল শৈলেন দে’র একমাত্র ছেলের স্নাতক পর্যন্ত লেখা পড়ার খরচের দায়িত্ব জেলা প্রশাসন থেকে গ্রহন করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে চাকুরীতে অগ্রাধিকার আছে পাশাপাশি স্নাতক পাশ না করা পর্যন্ত মাসে ৩ হাজার টাকা করে প্রদানের কথা ঘোষনা করেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা শৈলেন দে’র সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে পরিবারের জন্য যা করার দরকার তাই করবেন বলে প্রতিশ্র“তি দেন।
শোক সভায় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সন্তান প্রয়াত সাংবাদিক শৈলেন দে’র পরিবারকে সহায়তা করতে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্রো যতটুকু সম্ভব করবেন বলে প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য গত ৯ এপ্রিল আকষ্মিক হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে রাঙামাটির সর্বস্তরের সংবাদকর্মীদের মাঝে শোকে ছায়া নেমে আসে। শৈলেন দে একজন সৎ সাংবাদিকই নন, সবার কাছে একজন সজ্জন ব্যাক্তি, গবেষক ও নিরহংকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী মা এবং দুজনসহ সন্তানসহ অসংখ্য আত্বীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব রেখে গেছেন।
সাংবাদিক শৈলেন দে দৈনিক আজাদী ও দৈনিক ভোরের কাগজে দীর্ঘদিন কাজ করেন। এছাড়া স্থানীয় দৈনিক গিরিদর্পন ও দৈনিক রাঙামাটি পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।