শিরোনামঃ

শিবির ক্যাডার থেকে জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা তোফায়েল, ২টি এলজিসহ কার্তুজ উদ্ধার

অতিথি প্রতিবেদক, সিএইচটি টুডে ডট কম , বান্দরবান। এক সময়ের শিবির ক্যাডার থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গীদের নিরাপদ আশ্রয়দাতা হয়ে উঠেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অপসারণকৃত চেয়ারম্যান রামু সহিংসতার নায়ক তোফায়েল আহমেদ। শুক্রবার তার অস্ত্রভান্ডার থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।tofail

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে রামু থানায় দায়েরকৃত মামলায় জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন থেকে তোফায়েলকে গ্রেপ্তার করে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের একটি দল। শুক্রবার সকালে তোফায়েলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়ন থেকে ২টি এলজি ও ২টি কার্তুজ উদ্ধার করে রামু থানা পুলিশ।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়–য়া ফেসবুকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে একটি ছবি ট্যাগ করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পরলে উগ্রবাদীরা রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার,৩০টি বৌদ্ধ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। আর এ ঘটনায় স্থানীয় জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমেদ ও তার এক ভাগিনার সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশসহ গোয়েন্দারা। জানা গেছে, তোফায়েল ছাত্রজীবনে শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের নৃশংস আট খুনের অন্যতম আসামি হয়েও তিনি খালাস পেয়ে যান। রামুর বৌদ্ধ জনপদে সহিংস ঘটনার নেপথ্যে থাকা এক সময়ের এই দূর্দষ্য শিবির ক্যাডারের জোরালো ভূমিকা রাখার প্রমাণ পায় তদন্ত্র কমিটি।

গত বছরের জুলাই মাসে দুবাইয়ে ১৫দিন অবস্থান করে আরএসও-র ১৪ সদস্যের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এ কারণে রামুর ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে জোরালো মনে হয়। রামু সহিংসতার আগে দুবায়ে অবস্থানের কথা স্বিকার করলেও তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে আরএসওর সঙ্গে বৈঠক বা রোহিঙ্গা কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করেন।

আরো জানা গেছে, ধর্ম অবমাননার বিতর্কিত ছবিটি ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই উত্তম বড়–য়া’র ফেসবুকে সংযুক্ত (ট্যাগ) করে। তবে আবদুল মুক্তাদির এ ঘটনা প্রথম এলাকায় প্রচার করে বলে পুলিশের কাছে রিমান্ডে স্বীকার করে। তদন্ত্র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা হয়। তার আগের দিন ২৮ সেপ্টেম্বর তোফায়েল আহমেদের সাথে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ বাসায় বৈঠক করেন আলোচিত এই মোক্তাদির। এই ব্যাপারে তৎসময়ে তোফায়েল আহম্মেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তাদির আমার আত্মিয়, তবে তার সাথে আমার এই ঘটনা নিয়ে কোন কথা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাইক্ষ্যংছড়ির একাধিক বাসিন্দা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মৌলবাদী-জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা হিসাবে অভিযুক্ত তোফায়েল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’ (আরএসও) সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, জাতীয়তার সনদ প্রদান, বাংলাদেশি পাসপোর্টে মধ্যেপ্রাচ্যে রোহিঙ্গাদের পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক। শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়ই তিনি দেড় হাজার একরেরও বেশি জমির মালিক, ক্ষমতার দাপটে দখল করে নিয়েছে স্থানীয় অনেক অসহায়ের ভূমি।

বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল বশর বলেন, তোফায়েল রোহিঙ্গা ও শিবির জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা তা সরকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কক্সবাবাজার জেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বালুবাসা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। বাবা মরহুম আবুল হোসেন ছিলেন ইউনিয়নের মেম্বার। বালুবাসা গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাজীর পাড়া পূর্ব পাহাড়ে ছিল জঙ্গি সংগঠন আরএসওর একাধিক ঘাঁটি। ওই ঘাঁটিতে নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল তার। আরএসওর অত্যাধুনিক অস্ত্র এনে মাধ্যম হয়ে দেশে বিভিন্নস্থানে বেচাকেনা এবং অস্ত্রের চালান শিবির ক্যাডারদের কাছে সরবরাহ থেকে শুরু করে সব কাজই করতেন তোফায়েল আহমেদ। অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি মৌজার ৫৫ নং হোল্ডিয়ের মালিক আবুল হোসেন হলেও এই নামের সাথে তোফায়েলের পিতার নাম মিল থাকার কারনে তিনি জায়গাটি তার দেখিয়ে বান্দরবানের নাগরিকতার সনদ লাভ করে পার্বত্য আইন লঙ্ঘন করে বান্দরবানের বাসিন্দা বনে যান। আর ২০০৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এই ব্যাপারে আবুল হোসেনের পুত্র মুজিবুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের ভূমি জাল করে বান্দরবানের নাগরিকত্ব লাভ করে এখন এই ভূমি দখল করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থাকার সময় তিনি দেশের জাতীয়তার সনদ প্রদান করে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাকে রোহিঙ্গা কলোনি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে বিভিন্ন সময় আফগানিন্থান, সিরিয়া, পাকিস্তান ও দুবাই সফর করেন। রামুর ঘটনার পর তার অপরাধ জগত সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকলে অনলাইন নিউজ পেপার এনসিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম নামের একটি অনলাইন পোর্টাল এর সম্পাদক বনে গিয়ে তিনি নিজেকে সম্পাদক হিসাবেও প্রচার চালান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জামিল বলেন, রোহিঙ্গা জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা কিনা আমার জানা নেই, তবে উনার বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। তোফায়েল এই সহিংসতায় জড়িত বলে প্রমান পায় তদন্ত্র কমিঠি। ঘটনার পর থেকে তিনি পালাতক থাকলে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর কুচকাউয়াজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে উপস্থিত থাকলে কক্সবাজার ডিবি অভিযান চালায় কিন্তু তোফায়েলকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়।

প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিতির কারনে গত ১১ জুন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অপসারণ করা হয় এবং বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 280 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen