শিরোনামঃ

রামপালে বিদুৎ কেন্দ্র হতে দেয়া হবে না : খালেদা জিয়া

সিএইচটি টু ডে ডটকম ডেস্ক। বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন,  রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “বিদুৎ কেন্দ্র আমরা চাই। তবে রামপালে নয়, অন্য যেকোনো পছন্দমতো জায়গায় করতে হবে। সরকার কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদুৎ দেয়ার কথা বলে কুইক মানি অর্জন করেছে।”

Picture9

 

রামপালে বিদুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে- এমন মন্তব্য করে বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির যে আন্দোলন তাতে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান তিনি।

ওই কমিটির সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “আমরা আপনাদের পাশে আছি। যে ধরনের সমর্থন লাগে আমরা দেবো। দেশের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে যেকোনো ধরনের কাজ করতে রাজি আছি।”
রোববার বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে ১৮ দল আয়োজিত জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া আরো বলেন,আওয়ামী লীগ মানুষকে সন্মান করতে জানে না- এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ড. মোহাম্মদ ইউনূস দেশের জন্য সন্মান বয়ে এসেছেন। অথচ সরকার তাকে বিভিন্নভাবে অপমান করছে। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক দখল করার চেষ্টা করছে। সরকারের উচিত এটা ড. ইউনূসের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। অন্যথায় এটাও দেউলিয়া হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, “আমি সরকারকে বলব, অন্যকে সন্মান দিতে না পারলে নিজেরাও সন্মান পাবেন না। জনগণের কাছে ঘৃণিত হবেন। এসব বন্ধ করুন।”

 

নির্বাচন প্রতিহতের অঙ্গীকার করলেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বললেন, “হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হবে না, হবে না। তার অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন প্রতিহত করব, ইনশাল্লাহ।”

তিনি বলেছেন, “দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রশাসন, পুলিশ, বিডিআর, আনসার, সেনাবাহিনীসহ সবার সহযোগিতার কামনা করছি।” খুলনাবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাজপথে দেখা হবে। আন্দোলনে দেখা হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।”
খালেদা বলেন, “নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য প্রশাসনে দলীয়করণ করা হয়েছে।”

খুলনাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “সিটি নির্বাচনে খুলনাবাসী এই সরকারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। এজন্য সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পায়।”

যশোর-খুলনা মহাসড়কের রাস্তার বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “যে সরকার একটি রাস্তা মেরামত করতে পারে না, তাদের কাছে উন্নয়নের কোনো আশা করা যায় না। তাদের কাছে উন্নয়নের আশা করে লাভ নেই।”

বিডিআর হত্যাকাণ্ড, ইলিয়াস আলীর ঘটনা, হেফাজত ও গণজাগরণ মঞ্চের প্রসঙ্গে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা।

খালেদা জিয়া বলেন, “এ সরকারের কাছে উন্নয়ন চেয়ে লাভ নেই্। তাদের উন্নয়ন চোখে দেখা যায় না। তারা শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনির লাটা লুট করে নিজেদের পকেটে ভরেছে। জনগণের পরোয়া করে নাই। সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু হয়নি। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু করবে। সোনালী ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা লুট করেছে সরকার।”

আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীতে দলীয় করণ করেছে। আর হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে প্রশাসনের সবাই তার কথাই শুনবে। এখনই আমাদের রাস্তায় মিছিল সমাবেশ করতে দেয় না।”

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় সংবিধান অনুযায়ী হলেও বিচারপতি কেএম হাসানকে আপনারা মানেননি। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) কেন মানব? শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। এ নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।”

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনাদের সময় শেষ। প্রশাসনের লোকদের বলছেন, কথা না শুনলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাদের বাড়ি পাঠানোর ক্ষমতা আপনাদের নেই। আপনাদের সময় শেষ হয়েছে, এখন আপনাদেরই বাড়ি যেতে হবে।”

শনিবার বেলা দুইটার পর সমাবেশ শুরু হলে বেলা দুইটা ৪০ মিনিটের দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় মাঠের ভেতরের উপস্থিত লোকজন বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা স্লোগান দিতে থাকে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা বলেন, “হটাও হাসিনা, বাঁচাও দেশ। হঠাও আওয়ামী লীগ, বাঁচাও দেশ। তাই হাসিনাকে হটাতে রাজপথে নামতে হবে। দেখা হবে রাজপথে, আন্দোলনে। হয়তো ঢাকায়, নয় তো খুলনায়।”

বক্তব্যের শেষে এসে আটক সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন খালেদা।

জনসভায় আরো বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় জনসভার সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ড. আবদুল মঈন খান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও জাতীয় সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নূরুল ইসলাম দাদু, খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু এমপি, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী, জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরী আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান সরোয়ার।
সমাবেশ শেষে খুলনা সার্কিট হাউসে বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 248 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen