বিশেষ প্রতিবেদন, সিএইচটি টুডে ডট কম। সারাদেশে ক্ষমতাসীন দল তাদের জোটের সাথে ১৫৪ টি আসন ভাগাভাগি করে নিলেও পাহাড়ে ৩টি আসনে ১৪ জন খেলোয়ার রয়েছে তাই খালি মাঠ পাচ্ছে না আওয়ামীলীগ।
প্রধানবিরোধীদল বিএনপি ছাড়াই রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান ৩টি আসনেই এবার আওয়ামীলীগ বিজয় হতে কষ্ট হবে প্রতিটি আসনেই লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
রাঙামাটি ২৯৯ নং আসনে প্রাথীর সংখ্যা ৬ জন। এরা হলেন আওয়ামীলীগ নেতা দীপংকর তালুকদার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রাথী ও জেএসএস নেতা উষাতন তালুকদার (হাতি), জেএসএস সংস্কার এর স্বতন্ত্র প্রার্থী সুধাসিন্ধু খীসা (বই) সম অধিকার নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবছার আলী (আনারস) ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমা (উড়োজাহাজ) এবং জাপার ডা. রুপম দেওয়ান (লাঙ্গল)।
এর মধ্যে জাপা নেতা দলের ধুম্রজালের কারনে পোষ্টারিং নির্বাচনী প্রচারনা কিছুই করছে না জাপা প্রার্থী ডা. রুপম দেওয়ান। ইউপিডিএফের প্রার্থী সচিব চাকমা সমর্থন দিয়েছে জেএসএস এমএন লারমা গ্র“পের প্রার্থী সুধাসিন্দু খীসাকে। এখন ৪ জন প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এরা হলেন দীপংকর তালুকদার, উষাতন তালুকদার, সুধাসিন্ধু খীসা ও এড. আবছার আলী।
গত নির্বাচনে ৪জনের মধ্যে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৯শ ৭২ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চারদলীয় জোট প্রার্থী মৈত্রী চাকমা পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৪শ ২৯ ভোট। পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার পেয়েছেন ৫১ হাজার ৮শ ৩২ ভোট। এবার বিএনপি মাঠে নেই, লড়াই হবে নৌকা আর হাতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দু প্রার্থীই উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার কয়েকবার রাঙামাটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝখানে ২০০১ সনে আসনটি বিএনপি বিজয়ী হয়। ২০০৮ সনে মহাজোট বিজয়ী হওয়ার পর দীপংকর তালুকদার বিজয়ী হওয়ার পর তাকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পাহাড়ীরা তার বিরুদ্ধে চুক্তি বাস্তবায়ন না করা এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দেয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা জানান, ক্ষমতায় থাকলে নানা অভিযোগ থাকবে, তবুও আমাদের নৌকা মার্কায় বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
এদিকে দীপংকর তালুকদার এবার নির্বাচনী ইসতেহার এখনো পর্যন্ত বের না করলেও তার নির্বাচনী প্রচারনায় অসম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়া, অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার হাতি মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। ১৯৯৭ সনে ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির পর রাঙামাটিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সাথে বনাবনি না হওয়ায় ২০০১ সনে নির্বাচনে জেএসএস বিএনপিকে সমর্থন দেয় এবং ২০০৮ সনে নির্বাচনে জেএসএস নিজেরাই প্রার্থী দেয় তখন হাতি মার্কায় অর্ধ লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিলেন। জনসংহতি সমিতি পাহাড়ীদের সংগঠন হলেও এবার তারা অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী দাবী করে পাহাড়ে সত্যিকারের শান্তি স্থাপনে পাহাড়ী বাঙ্গালী সবার কাছে হাতি মার্কায় ভোট চেয়েছেন।
উষাতন তালুকদারের নির্বাচনী এজেন্ট উদয়ন ত্রিপুরা বলেছেন, আমরা এবার জনসমর্থন কত সেটি দেখার জন্য বিজয়ী হওয়ার জন্য নির্বাচন করছি। এর আগে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন আর আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত হলে পার্বত্য এলাকার সকল মানুষের কথা বলবে।
ইতিমধ্যে উষাতন তালুকদার তার নির্বাচনী ইসতেহার প্রকাশ করেছেন। সেখানে জনগনের কাছে ১০টি প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারনায় পিছিয়ে নেই জেএসএস এমএন লারমা গ্র“পের সুধাসিন্ধু খীসা। ইউপিডিএফ তাকে সমর্থন দিয়েছে। তবে আধিপত্যে লড়াইয়ের কারনে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে সব জায়গায় যেতে পারছে না। সুধাসিন্ধু খীসা বই মার্কা নিয়ে রাজস্থলীতে নির্বাচনী প্রচারনাকালে দুবৃর্ত্তরা তার গাড়ী লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে এতে গাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি অক্ষত ছিলেন।
সম অধিকার আন্দোলনের নেতা এড. আবছার আলী নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি শহরে ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আনারস মার্কার পক্ষে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি দলমত নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষায় আনারস মার্কায় ভোট চেয়েছেন।
এবার নির্বাচনী মেরুকরনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি না আসলেও বিএনপির ভোট নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন নেতা কর্মীসহ সকলকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বারন করলেও পাহাড়ীদের একটি অংশ দীপংকর তালুকদারকে ঠেকাতে হাতি মার্কায় ভোট দিবেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। তবে এনিয়ে বিএনপির নেতারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা বিএনপির সভাপতি এড. দীপেন দেওয়ান বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আহবানে আমরা ভোট কেন্দ্রে যাব না এবং আমরা একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে জনগনকে ভোট কেন্দ্রে না যাবার আহবান জানাচ্ছি।
যদিও বা নির্বাচনের অনেক দিন বাকি তবুও রাঙামাটি আসনে নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। বিএনপি না থাকায় এই আসনে মুল প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার এর সাথে জেএসএসের স্বতন্ত্র প্রার্থী উষাতন তালুকদার এর। এবার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে জেএসএস। সেক্ষেত্রে বিএনপির ভোটগুলো একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
এদিকে বান্দরবান আসনে খালি মাঠ নিয়ে আওয়ামীলীগের জন্য। চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের সাথে জেলা আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত সভাপতি প্রসন্ন্ কান্তি তংচঙ্গ্যা নির্বাচন করছে। এই আসনে মোট প্রার্থী ৪জন তারা হলেন বীর বাহাদুর (নৌকা) জেলা আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত নেতা প্রসন্ন কান্তি কান্তি তংচঙ্গ্যা (টেবিল ঘড়ি) ইউপিডিএফের ছোট কান্তি তংচঙ্গ্যা (হাতি) ও লামার স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান (টিয়া পাখি)।
এর মধ্যে জেএসএস প্রসন্ন্ কান্তি তংচঙ্গ্যাকে সমর্থন দেয়ায় ধারনা করা হচ্ছে ভোটের মাঠে লড়াই হবে বীর বাহাদুর ও প্রসন্ন্ কান্তি তংচঙ্গ্যার মধ্যে।
খাগড়াছড়িতে প্রাথীর সংখ্যা ৪জন। এখানে মহাজোটের প্রার্থী ২জন হওয়ায় তৃতীয় কোন ব্যাক্তি বিজয়ী হতে পারেন। এই আসনে আওয়ামীলীগের কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (নৌকা) জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ (লাঙ্গল) ইউপিডিএফের প্রসীত খীসা (হাতি) এবং জেএসএস এমএন লারমা গ্র“পের মৃনাল কান্তি ত্রিপুরা (বই) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী সোলায়মান শেঠ লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করছেন। আওয়ামীলীগের প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা নৌকা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জোটের দুই প্রাথীর ভোট কাটাকাটির মাঝে বিজয়ের মালা পড়তে পারেন ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসা। কারন জেএসএস এমএন লারমা গ্র“প তাকে সমর্থন দিয়েছে। খাগড়াছড়িতে মহাজোট প্রার্থী জাপার সোলায়মান শেঠ খাগড়াছড়ির স্থানীয় না হওয়ায় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা বহিরাগত ব্যাক্তিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মানতে নারাজ।
সব কিছু মিলিয়ে সারাদেশ থেকে ব্যাতিক্রম পাহাড়ের ৩টি আসন। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলে বুঝা যাবে পাহাড়ে নতুন মুখ আসে নাকি পুরানো রাই বহাল থাকে।