শিরোনামঃ

বান্দরবানে বিএনপি আওয়ামীলীগে দলীয় কোন্দলের মাঝেও লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

রফিকুল আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম,বান্দরবান। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৩০০ নং বান্দরবান সংসদীয় আসনে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। আওয়ামীলীগের দুর্গে এবার বিএনপি হানা দেয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দুদলে রয়েছে কোন্দল। জেলা সদরসহ ৭ টি উপজেলা- নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, রুমা অঞ্চল নিয়ে এ সংসদীয় আসনটি গঠিত।
বিগত নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এখানে মূলত ভোটযুদ্ধ হয় বিএনপি এবং আ.লীগ প্রার্থীর মধ্যে। এবারো বড় এই দুই দলের মধ্যেই নির্বাচনী লড়াই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

বিশ্বস্থ সূত্র মতে, আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান ৩০০ নং আসনে বীর বাহাদুর উশেসিং (আ.লীগ), প্রসন্ন কান্তি তঞ্চংগ্যা (আ.লীগ) মাম্যাচিং (বি.এন.পি) সাচিং প্র“ জেরী (বিএনপি), কাজী মহতুল হোসেন যত্ন (বিএনপি) এস.এম আব্দুচ ছালাম আযাদ (জামায়াতে ইসলামী), ক্যা চ অং (জাতীয় পার্টি-এরশাদ), কেএসমং (জে.এস.এস) স্ব-স্ব দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বড় দলগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল (ইউ.পি.ডি.এফ) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ছোটন কান্তি তঞ্চংগ্যাও।MP

জোট-মহাজোট এবং জাতীয় রাজনীতির প্রভাব তেমন না থাকলেও পার্বত্য এ জেলাটিতে আ.লীগের অর্ন্তকোন্দল অন্যান্য যে কোন সময়ের চেয়ে এবার বেশি প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। আ.লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে বিগত ৫ বছরে জেলা আ.লীগের কিছু সিনিয়র নেতার বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড ভাবিয়ে তুলেছে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীদের।

দলীয় বিশ্বস্থ সূত্র মতে, পরপর ৪ বারের নির্বাচিত আ.লীগের বর্তমান সাংসদ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর বিগত দিনে এলাকায় যোগাযোগ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখলেও তৃনমূল নেতা কর্মীদের সাথে দুরত্ব-দুর্ব্যবহারের কারণে আগের সেই জনপ্রিয়তায় অনেক ধ্বস নেমেছে। সাধারন নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অতি সম্প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগে জেলায় কর্মরত সকল প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা সাংসদের সংবাদ বর্জনের মতো সিদ্বান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। সাধারণ মানুষ বিষয়গুলোকে ক্ষমতার দাপট এবং অহমিকা বলেও বাঁকা চোখে দেখছেন।
এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং দারিদ্র বিমোচনে বিগত দিনে সাংসদ বীর বাহাদুরের ভুমিকা নিয়েও সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট নয়, এমন অভিমত উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। এছাড়াও বীর বাহাদুরের নাম ভাঙ্গিয়ে দলের কিছু সিনিয়র নেতার অনিয়ন্ত্রিত দূর্নীতি এবার দুর্গ হারানোর শংকায় ভোগাচ্ছে আওয়ামীলীগের ত্যাগী এবং সাধারণ নেতাকর্মীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, রাজনীতিতে নিজস্ব প্রভাব সৃষ্টি করার জন্য নিজ অনুসারীদের প্রাধান্য দিয়ে আ.লীগের কমিটি গঠন, তৃনমূল নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দেয়া, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ক্যাশৈহ্লা কর্তৃক নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে শিক্ষক ও স্বাস্থ্য-সহকারী নিয়োগে বাণিজ্যের মাধ্যমে বি.এন.পি-জামায়াত নেতাকর্মীদের এবং নিজ আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ ভাগবাটোয়ারা, ক্যা শৈ হ্লার কর্মকান্ড নিয়ে নেতাকর্মীদের অসন্তুষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপুর্ন অঙ্গসংগঠনের মধ্যেই গ্র“পিং চালু হয়েছে।

অপরদিকে রাজনীতির মাঠে উল্লেখযোগ্য পদচারণা না থাকার পরও শুধুমাত্র বীর বাহাদুরের পরিবারের সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি পদে ক্য শৈহ্লা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ক্য.সা.প্র“কে ওই পদে নিয়ে আসেন এমপি, এমন অভিযোগ কর্মীদের। আর এসব কারণে এবার প্রথমবারের মতো বীর বাহাদুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করেছেন প্রবীন রাজনীতিবিদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা। আসন্ন সংসদ নির্বাচন বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিগত দিনের মতো ধারাবাহিকভাবে এই আসনে জয়ী হবেন বলে ধরে নিলেও আসলে ভেতরের খবর অন্যরকম। প্রার্থীতা নিয়ে তৃনমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে, এটা নেত্রীকে অবহিত করব। ভুমি সমস্যাসহ-আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে এখানে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
অপর দিকে বান্দরবান জেলা বিএনপি’র একাংশসহ বেশিরভাগ অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী দুই ধারায় বিভক্ত। স্বেচ্ছাসেবক দল পুরোটাই বর্তমান সভাপতি সাচিংপ্র“ জেরীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কোন্দলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিএনপি’র এই তথৈবচ অবস্থা সদরসহ সব উপজেলায় বিরাজমান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মাম্যাচিং দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে আ.লীগ প্রার্থী বীর বাহাদুরের কাছে মাত্র ৮শ’ ৫৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। একই সময় বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি সাচিং প্র“ জেরী দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ১৩ হাজার ১৮ ভোট পেয়েছিলেন, যা বিএনপি সমর্থকদের ভোট। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বি.এন.পি’র সাচিং প্র“ জেরী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ৫৯ হাজার ১৭৪ ভোট পান। তখন আ.লীগ প্রার্থী বীর বাহাদুর ৭৮ হাজার ৯৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এই দুই নেতার বিরোধ মিটলে এবং জনমত বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দেয়া হলে এবার বিএনপি বান্দরবান আসনে জয়ের মুখ দেখবে এমন মত জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।

মনোনয়ন পাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক মাম্যাচিং বলেন, কেন্দ্র যদি যাচাই-বাছাই করে সঠিক মনোনয়ন দেয় তা হলে আমাদের কোন্দল থাকবে না, আমরাই জয়ী হব।
এদিকে জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মহতুল হোসেন যতœও বাঙ্গালী নেতৃত্বের অভাবের কথা মাথায় রেখে আসন্ন নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জনিয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জেলার ২টি পৌরসভা-বান্দরবান, লামা এবং উপজেলা নির্বাচনে ৭ টি উপজেলার মধ্যে আলীকদম, থানচি এবং সদরসহ ৩টি তে বি.এন.পি প্রার্থী বিজয়ী হয়। আর লামা, রোয়াংছড়ি ২টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ এবং রুমায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) প্রার্থী জয়লাভ করে। স্থানীয় এসব নির্বাচনে কাংখিত সফলতা না আসায় আওয়ামী লীগের ঘর নড়বড়ে এবং জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে এমন মত এলাকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

অপর দিকে সংসদীয় এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জাতীয় পার্টি থেকে ক্যচ অং মার্মা দলীয় মনোনয়ন পাবেন এটা একপ্রকার নিশ্চিত। ১৮ দলের শরীক জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এস.এম আব্দুছ ছালাম আযাদ জোটের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে আঞ্চলিক রাজনীতির সুবাদে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) থেকে নির্বাচন করতে পারেন কেএসমং এবং ইউ.পি.ডি.এফ থেকে ছোটন কান্তি চাকমা।

বড় দুটি দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত পার্বত্য জেলার ৩০০ নং আসনটি ৫ম বারের মতো ধরে রাখতে হলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে এনে আ.লীগকে কোন্দল নিরসন করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপিকে জয়ী হতে হলে দ্রুত কোন্দল নিরসন করে এক কাতারে আসতে হবে, আর তাতেই ধরা দিতে পারে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাংখিত সাফল্য।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 512 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen