শিরোনামঃ

পাহাড়ে সৃজনশীল প্রকাশনার পথ উন্মুক্ত হোক – প্রদীপ চৌধুরী

পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃজনশীল প্রকাশনার ইতিহাস বেশ পুরনো। আশি এবং নব্বই দশকে বুদ্ধিবৃত্তিক মনন ও চিন্তা চর্চার অবিনাশী এক ফল্গুধারা পাহাড়ের পরতে পরতে সুঘ্রাণ ছড়িয়েছিলো। কবিতার এক সাহসী বয়ান উদ্বুদ্ধ করেছিলো Prodipতরুণদের।
হয়তো রাজনীতির উত্তাল হাওয়ায় উদীপ্ত সময়, ‘সময়ের সাহসী কন্ঠজন’রা শ্লোগানের চেয়ে সৃজনশীলতাকে বেশী উপযুক্ত মনে করেছিলেন। সেই ভাবুক প্রজন্মের হাত ধরেই পাহাড়ের প্রায় প্রতিটি মানসপটে নানা ছন্দ-পতন ঘটলেও সময়ের ¯্রােতে ম্লান হয়ে পড়েছে যেনো, সৃজনশীলতা।
তার মানে আমি এমন কোন অবজ্ঞা বা অভিযোগ করছি না যে, পাহাড়ের সাহিত্য, চিন্তা ও মনন, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ এবং মনো উৎকর্ষতায় ভাটা পড়েছে।
সৃজনশীলতায় অনিয়মিত সাধারণ একজন পাঠক হিসেবে বলতে চাই, বিগত প্রায় দেড়যুগ ধরে তিন পার্বত্য জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নানামুখী প্রকাশনা আলোর মুখ দেখেছে। এসব প্রকাশনার কতোটি সাহিত্যমনস্ক এবং কতোটি রাজনীতি মনস্ক, তা; সময়ই নির্ধারণ করবে। কিন্তু এরমধ্যে কতোটি সাহিত্যিক নিক্তিতে উৎরে যাবে, সে প্রশ্নটিও প্রাসঙ্গিক।
উপরের সব বক্তব্যই, আমার নিজের হলেও সর্বসাধারণের মুখ থেকে সৃজনশীল প্রকাশনা সর্ম্পকে এমনসব কথাই শুনে আসছি।
এবার আসি প্রকাশনার সাথে নিজের সামান্যতম সম্পৃক্ততা এবং প্রকাশনা আয়োজনের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে।
লেখালেখি করার মানসিকতাটি প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই কৈশোর বয়স থেকেই সঞ্চারিত হয়ে থাকে। কেউ সে পথ ধরে অনেকদূর যেতে পারেন আবার অনেকে থমকে যান। এর ব্যতিক্রমও ঘটে থাকে। পরিণত বয়সে-পরিণত পাঠক হয়ে উঠেন দেশ-সমাজের ঋদ্ধ লেখক।
সচরাচর আমাদের মতো থমকে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশী। আর সংখ্যায় বেশী এই ‘আমরা’ই লেখালেখি’র ভোক্তা হয়ে উঠি। কোন কোন সময় খেয়ালের বশে, আমরা হয়ে উঠি ছোটখাটো প্রকাশনার আয়োজকও।
গত একযুগে আমার বেলায় অনেকবার ঘটেছে এমন আয়োজন সম্পৃক্ততা। সেই আয়োজন অভিজ্ঞতাগুলো নিঃসন্দেহে অম্লমধুর। এক্ষেত্রে লেখকের সংকটের চেয়ে পৃষ্ঠপোষকতার সংকটটি বেশ বড়ো হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, পার্বত্য জেলাগুলোতে শান্তিচুক্তি’র পর ‘কোটিপতি’ মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধিও। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি বুদ্ধিবৃত্তির প্রণোদনা। আপনি যতো বড়ো লেখক-ই হোন বা পরিচিত হোন; সরকারী-স্বায়ত্বশাসিত এবং আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন চাইতে গেলে শুনতে হবে অজ¯্র প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় শলা-পরামর্শ। একদিন-দু’দিন এবং সপ্তাহ পেরোলে বিরক্ত আপনি কী আর ওইমুখো হবেন?
আর একেবারে বেসরকারী সংগঠন (এনজিও) হলে সোজা জবাব, ‘আমাদের এ ধরনের ফান্ড নেই’।
ভীষণ একটা অস্বস্তির জায়গা তৈরী হয়েছে ঐতিহাসিক পার্বত্যচুক্তি সম্পাদন কালের পর থেকে। এখানকার অনির্বাচিত অথচ শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কাঠামোগুলোর রাজনৈতিক চরিত্র এতো উদগ্র হয়ে উঠে যে, তাঁদের কাছে একটি প্রকাশনা আয়োজনের কষ্টসাধ্য যেকোন উদ্যোগই খোলাচোখে রাজনীতিদুষ্ট। কখনো কখনো তাঁদের কাছে, এসব কার্যক্রম সন্দেহজনকও ঠেকে।
অথচ কতো অপ্রয়োজনীয় কাজেই প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর অপচয়-অতিব্যয় এবং অপব্যয় করে চলেছে!
কেনো এমন বন্ধ্যাত্বে ভুগছে পাহাড়ের শহর-সমৃদ্ধ গ্রামগুলো। কেনো দিনকে দিন কমে আসছে সৃজনশীল প্রকাশনা? এর দায়-ই বা নেবে কে? এমন সব অসীম উদ্বেগপূর্ন চিন্তার মাঝেও উচ্চারণ করতে চাই, ‘পাহাড়ে সৃজনশীলতার পথ উন্মুক্ত হোক’।
অন্তত পাহাড়ি এই জনপদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ভবিষ্যত ভিত্তিভূমি সূচনার জন্য এখনিই এগিয়ে আসা উচিত সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠান এবং শুভকামী সামর্থ্যবান মানুষদের।
কারণ সব সমাজের-ই ভালো এবং মন্দ পরিণতির সাথে ওই সমাজের-অঞ্চলের কাব্য ও সাহিত্যপ্রেম’র একটি যোগসূত্র প্রোথিত থাকে।

প্রদীপ চৌধুরীঃ পাহাড়ের সংবাদকর্মী

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 541 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen