শিরোনামঃ

কে জানতো দাদার এই বিদায় শেষ বিদায় হবে

পাহাড়ের আলোকিত মানুষ শৈলেন দে : মোহাম্মদ আলী

পাহাড়ের গণ মানুষের নিকট একটি পরিচিত ব্যক্তিত্ব হলো শৈলেন দে । তিনি সুদীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে তার লেখনীর মাধ্যমে পাহাড়ের দুঃখী মানুষের নিত্য দিনের নিখুঁত ছবি সমাজের নিকট shilen daতুলে ধরেছেন। অথচ তাঁর জীবনের হাজারো কষ্টের একটি ছবিও কোথাও তুলে ধরার সুযোগ পাননি তিনি।

সাংবাদিক শৈলেন দা সততা ও নিষ্ঠার ক্ষেত্রে ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং নীতির ক্ষেত্রে ছিলেন আপোষহীন। চলার পথে তিনি ছিলেন অতি সাধারণ মানুষ কিন্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ছিলেন ,একেবারে একরোখা। তিনি জীবনে কারো কাছে মাথা নত করেননি।সততাকে তিনি সংবাদিকদের ভূষণ বলে মনে করতেন তাই কখনো সততাকে বির্সজন দেননি। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাকে এক কাপ চা খেতে ডেকেছিলেন । তিনি মনে করেছেন নির্বাচনের আগে জেলা পরিষদে প্রচুর খাদ্য শস্য এসেছিল ওখান থেকে চেয়ারম্যান তাকে কোন সাহায্যে দিতে পারে তাই তিনি যানযন। তার ক্ষোভ ছিল বিগত ৫বছর ধরে কেউ এই শহীদ পরিবারের খবর নেয়নি। শেষ সময়ে চা খেয়ে আর কি লাভ হবে। এই জন্য তিনি শুধু প্রশাসনের বিরাগ ভাজন হয়নি তা নয় তার জীবনে অসংখ্য কলম সৈনিকেরও ঘৃনার পাত্র হয়েছিলেন।এই কারণে তার পরোলোকের পরও তাকে এক নজর শেষ দেখার জন্য এই শহরের অনেক সহযোদ্ধা তার লাশ দেখা বা শোকার্ত পরিবারে প্রতি সমবেদনা জানাতে খোড়া যুক্তি দেখিয়ে যায়নি। তিনি কলমকে কখনো নিজের অবৈধ টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেননি এবং অপরকেও এই কাজে সহায়তা করেননি। যার ফলে অনেক কলম সৈনিক তাকে পছন্দ করতেন না। এই রাঙামাটি শহরের অনেক বিত্তবান লোক ও বিভিন্ন সংস্থার কর্তা ব্যক্তির সিড়ি হিসাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় তিনি অনেকের আস্থা হারিয়েছেন। সাংবাদিক শৈলেনের পরিবার ছিল বৃটিশ আমল থেকে একটি বনেধি পরিবার। বঙ্গর গোষ্ঠী নামে এরা পুরাতন রাঙামাটি থেকে সকলের পরিচিত পরিবার।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শৈলেন দার বারা মনোরঞ্জন দে সহ যোগ্য চার নিকট আতœীয়কে হানাদার বাহিনী হত্যা করেছে। তখন শৈলেন দে ছিলেন নবম শ্রেনীর ছাত্র। বাবা শহীদ হাওয়ার পর থেকে শহীদ জয়া মা, ছোট বোন ও ২ভাইকে নিয়ে তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়। যা আমৃত্যু পর্যন্ত চলছিল।
শৈলেন দা জীবন সংগ্রামে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রথমে হয়েছেন ডাক্তার, সেই সময়ে তিনি অনেক দুঃখী মানুষের সেবা করেছেন। তিনি ডাক্তারী পড়েননি। তবুও তিনি ডাক্তার । তিনি একবার এক ম্যালেরিয়া রোগীকে শুধু শরীরের গন্ধ দিয়ে সনাক্ত করে ম্যালিরিয়ার ওষুধ দিয়ে ভাল করেন। ঘটনাটি জানা জানি হয়ে সিভিল সার্জন পর্যন্ত ঘড়িয়েছে। এক পর্য়ায়ে সিএস তাকে ডেকে নিয়ে চিকিৎসার কথা জানতে চায়। তিনি রোগীর শরীরের গন্ধ শুখে চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান। এব পর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে রোগীর চিকিৎসা করার জন্য একটি সনদ প্রদান করেছিলেন। ব্যক্তি জীবনে আমিও তার নিকট থেকে অনেক চিকিৎসা নিয়ে ঋনী রয়েছি। এরপর খাগড়াছড়ির গুইমারায় নিজের পৈত্রিক জমি কায়িক পরিশ্রম করে আবাদ করে চাষাবাদ করে। পুর্ণবাসিত কিছু বাঙ্গালী ওই জমি জবর দখল করায় তারা কষ্টে পড়ে। এর পর শুরু করে সাংবাদিকতা । বঙ্গলক্ষী ফার্মসীতে ওষুধ বিক্রির ফাঁেক ফঁেক কয়েক বন্ধু মিলে শহরের তবল ছড়িতে প্রকল্পনা সাহিত্য নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে। এর পর এরা ৭ বন্ধু মিলে সপ্তর্শি নামে আরো একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলে। শৈলেন দে ভালো নৃত্য শিল্পি ও নাট্যকার ছিলেন ।
শৈলেন দে ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে একেএম মকছুদ আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক বন ভূমির ৩য় সংখ্যা থেকে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। ৭৮ সালে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফটিকছড়ি থেকে রাঙামাটিতে বড় জেঠার বাড়িতে বেড়াতে আসি । তখন মকছুদ ভাই এর রাঙামাটি প্রকাশনীতে বনভূমির পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্যান্য পত্রিকাও বিক্রি হতো সেই সময়ে বিনা পয়সায় পত্রিকা পড়তে গিয়ে শৈলেন দার সাথে দেখা হয়। অবশ্য বিনা পয়সায় এখনো মকছুদ ভাই মানুষকে পত্রিকা পড়ান। ১৯৭৯ সাল থেকে ফটিকছড়ি থেকে আমি প্রথম দৈনিক দেশে সাংবাদিকতা শুরু করি। সেখান থেকে বনভূমিতে লিখা লেখি শুরু করি । ১৯৮৩ সালে কলেজ জীবন শেষ করে আমি স্থায়ী ভাবে রাঙামাটি চলে আসি । এর পর থেকে দৈনিক গিরিদর্পনে লিখতে শুরু করি । তখন থেকে শৈলেন দার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।
আমরা দুই বন্ধু পিআইবির স্বনামধন্য প্রশিক্ষক নাসিম ভাইয়ের অধীনে সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তিনি পরিবারের সব বিষয় নিয়ে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে ও ক্লাবের বাইরে বসে আমার সাথে শেয়ার করতেন। ১৯৯৪ সালে রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে রাঙামাটিতে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য এক খ- জায়গা বন্দোবস্তী নেয়ার জন্য আবেদন করা হয়। সেখানে আমরা সবাই জায়গা নেয়ার জন্য আবেদন করলেও মকছুদ ভাই ও শৈলেন দা আবেদন করেনি। দাদার দাবী হলো তাকে তবলছড়ির কালি বাড়ির পশ্চিমের তলী জায়গাটি দিতে হবে । কারণ তিনি সেটা আবাদ করেছেন। এই বিষয় নিয়ে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারিজাত কুসুম চাকমার সঙ্গে তার অনেক কথাকাটাকাটি হয়েছে পরে জায়গাটি দাদাকে না দিয়ে অন্যজনকে চেয়ারম্যান দিয়ে দেন। যেহেতু তিনি খুবই জেদি ছিলেন সেই কারণে জেলা পরিষদ থেকে তার নামে আর কোন জমি নেননি। তাদের পরিবার থেকেও রাঙামাটিতে কোন জমি দেয়নি। যার ফলে রাঙামাটিতে দাদার পরিবারে পৈত্রিক কোন জমি না থাকায় দাদার বোনের জন্য রাজার নিকট থেকে স্থায়ী সনদ নিতে পারেননি। অবশ্য তৎকালিন পরিষদ চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান সহায়তা করায় তার বোনের চাকরি হয়েছিল। এই জন্য

তিনি দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে প্রতিক্ষা করেও রাঙামাটিতে দাদার নামে জমি কোন জমি বন্দোবস্তী নিতে পারেনি।া জমি বন্দোবস্তি না নিলেও অনেক কষ্ট করে দেবাশীষ নগরে এক খন্ড জমি ক্রয় করেন তিনি । তবলছড়িতে মায়ের নামে যে সামান্য জায়গা রয়েছে তা হুকুম দখল হয়ে যায় । যা নিয়ে তার যত বিরম্বনা । পরে জেলা প্রশাসক তা বদল করে অন্য স্থানে দেয় এই নিয়ে তিন ব্যক্তি দাদাকে অহেতুক কষ্ট দিয়েছেন। যা দাদার জন্য অনেকটা অসহনী হয়ে দাড়িঁেয়ছিল।
দাদা এতই উদার ছিলেন যে দৈনিক আজাদী , ভোরের কাগজে যখন দাদার অজান্তে ছোট ভাইরা কাজ করা শুরু করে, তখন তিনি ওই ২টি পত্রিকা ছেড়ে দেয়। কিন্তু ভোরের কাগজ টাকা না দিলেও তাকে জেলা প্রতিনিধি থেকে কোন সময় বাদ দেয়নি। তার নামে ভোরের কাগজ থেকে চিঠি পত্র পাঠানো হতো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত । পাহাড়ে সাংবাদিকতায় নানা অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে দৈনিক আজাদী তাঁেক সন্মানা ক্রেষ্ট দিয়েছেন। তিনি সাপ্তাহিক নিপুণ , সাপ্তাহিক অর্থনীতি, সাপ্তাহিক পার্বতীতে ও কাজ করেছেন। তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল গিরিদর্পন ও মকছুদ ভাই এর প্রতি তার অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসা ছিল । মারা যাওয়ার আগে গত ৭এপ্রিল তিনি রাঙামাটি প্রেসক্লাবে এসেছিলেন ওইদিন আমি রাঙ্গুনীয়ায় আমার এক নাতির বিবাহ খেতে গিয়েছিলাম । আমি না আসা পর্যন্ত তিনি আমার জন্য অপেক্ষ করেছেন । তিনি খুব বেশী ধার্মিক ছিলেন তাই তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় নিরামিষ খেয়েছেন। তাই সাধারনতঃ তিনি সন্ধ্যার পর কোন চা পান করতেন না। সেইদিন দাদাকে অনেক ক্লান্ত দেখা গিয়েছে এবং ২জনে মিলে রাতে চা খেয়েছি। চায়ের পয়সা তিনি দিতে ছেয়েছেন কিন্তু আমি দিতে দেয়নি। তিনি এক রোগা হলে মাঝে মধ্যে আমার কথা মানতেন। সেইদিনেরটাও তাই হয়েছে। সেইদিন দুই বন্ধুর মধ্যে বন্ধুবান্ধব ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে যা এই পরিসরে বলাটা অনেকটা দুষ্কর । শৈলেন দা নতুন করে মকছুদ ভাইকে সাহায্যে করতে চেয়েছিলেন তার বিশ্বাস ছিল তিনি থাকলে ইত্তেফকে প্রতিদিন বসের (মকছুদ ভাই) নিউজ থাকবে। এই নিয়ে মকছুদ ভাইয়ের সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যে কথা বলার ইচ্ছা ছিল । যা আর কোনদিন পূরণ হবে না। তিনি ওইদিন আমার নিকট তার খুবই অভাবের কথা বলেছিলেন। কারণ তার মায়ের চিকিৎসার ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে জানান। তার মা দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসেস এ অসুস্থ হয়ে বিছনায় শুয়ে আছেন। জন্ম থেকে তার মেয়ে স্বতিতা দে প্রতিবন্ধী অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। এই দুঃসহ আর্থিক কষ্ট থেকে পরিত্রান পাবার জন্য দাদার অনেক কষ্টের মাথা গুজার শেষ সম্বলটা দাদার অংশ বিক্রি করার জন্য প্রথমে তার দুঃখের সাথী রানু প্রভা দে এর নিকট পরা মর্শ চেয়েছেন । তার স্ত্রী রানু তাকে বলেছিলেন যে জমিটি আপনি বিক্রি করতে চেয়েছেন,ওই জমি আবাদ করতে আপনার শরীর থেকে একফোটা গাম পড়েনি এমন কোন জায়গা আছে কিনা বলুন । থাকলে বিক্রি করুন। তিনি (স্ত্রী)বলেন ভিটা বিক্রি না করে আমাকে একটু সাহায্যে করুন আমি আমাদের সড়কের এক পাশে বসে কাচাঁ তরকারির ব্যবসা করবো। তার সহধর্মীনির কথা শুনে দাদা আমার নিকট ছুটে এসেছিলেন বিষয়টি বোঝার জন্য আমিও একমত হয়ে বসত ভিটা বিক্রির না করার জন্য অনুরোধ করি। তখন দাদা আমাদের কথায় একমত হয়ে চৈত্র সংক্রান্তিতে আমাকে পরিবার সহ বাসায় দাওয়াত দিয়ে শেষ কথা বলে বিদায় নিলেন । কে জানতো দাদার এই বিদায় শেষ বিদায় হবে। না হলে আমি শেষ বারের মতো দীর্ঘ ৩১ বছরের হিসাব নিকাশ শেষ করে আমিও বিদায়ের ক্ষমা চেয়ে নিতাম। ৮এপ্রিল রাতে দাদা গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে অথচ দাদার বিশাল বন্ধু বহরের কেউ জানে না । তারা শেষ সময়ে কোন কাজে আসলো না । ৯ এপ্রিল বেলা সোয়া ১১টায় দাদাকে রাঙামাটি হাসপাতালে নেয়া হয়। একেবারে শেষ সময়ে ডাক্তার নুপুর দাদার অসুখের খবর দিল সুনীল দাকে, সুনীল দা দিল আমাকে । বিধি বাম সুনীল দার গাড়ি তখন অনেক দূরে। দুই জনই ছুটলাম হাসপাতালে টেক্সী নিয়ে । গিয়ে দেখি বেলা শেষ । সুনীল দা হাসপাতালের করিডোরে চোখের জল ছেড়ে দিল । অমি অদম অনেক কষ্ট করে শৈলেন দা প্রান প্রদীপ নিবে যাবার করুণ দৃশ্য দেখে চোখের জলে বুক ভাসালাম। এক হাতে নিজের চোখ মুচছিলামে আর এক হাত দিয়ে দাদার নিথর দু’চোখে হাত বুলাইয়ে দিয়ে চির দিনের জন্য দুটো চোখ বন্ধ করে দিলাম । এর পর হাত পা গুলো সোজা করে দিয়ে তার শার্ট দিয়ে তার নিথর শরীরটা ঢেকে দিলাম। পরে নন্দন এসে তাদের ধর্মীয় নিয়ম অনুসারে দাদার ২ পা আসন করে দিল। যা কোন আপন জনের জন্য অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। আমার আর সুনীলদার পকেটে অনেক টাকা ছিল যা শৈলেন দার চিকিৎসার জন্য নেয়া হযেছিল অথচ এই আধুনিক যুগেও শৈলেন দার জন্য আমরা সব থাকার পরও কোন চিকিৎসা করাতে পারলাম না এটার চেয়ে জীবনের বড় বেদনা আর কি হতে পারে। যা এখনো আমার চোখে প্রতিনিয়ত পিঢ়া দিয়ে যাচ্ছে এবং করুণ চিত্রটি ভেসে বেড়াচ্ছে। এখন আমার বারবার মনে পড়ে দাদার মাথা গোজার ঠাই করার জন্য সেই সময়ে আমার যা যা করা দরকার ছিল আমি সবই করার সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু চিকিৎসার জন্য কিছুই করতে পারলাম না আমার মতো মায়াধন চাকমা ও একই বিলাপ করছেন। সেদিন মোবাইল ফোনের নেট ছিল না। আমি আর সুনীল দা তার মুত্যুর সংবাদটি ঠিকমতো সবাইর নিকট পৌছাঁতে পারিনি। যার করুণ কথা মনে পড়লে আমার এখনো বিনিদ্রা রজনী কাটে। একজন সৎ ব্যক্তি এভাবে এই নস্বর পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিল। বড় আফসোস আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। এটাকে বলে নিয়তির খেলা ।

 

লেখক, সাধারন সম্পাদক রাঙামাটি প্রেসক্লাব।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 619 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen