শিরোনামঃ

৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন সম্পন্ন

পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন দিনের সূচনা করতে চাই : প্রসিত খীসা

সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। রাজধানী ঢাকায় গত ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব-নারী কনভেশন সম্পন্ন হয়েছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স যৌথভাবে এই কনভেনশন আয়োজন করে।

দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহের কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান), সাভার, কাঁচপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে বিভিন্ন জাতিসত্তা, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক ও নারী ও বিভিন্ন সংগঠনের পৌনে চার শতাধিক প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

কনভেনশনে ৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব, দাবিনামা ও কর্মসূচি সর্বসম্মতভাবে গৃহিত হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলরুমে কনভেনশন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনভেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক, সিলেট চা-জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমাসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

কনভেনশনের ২য় দিনের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে। অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বিপুল চাকমার সঞ্চালনায় ২য় দিনের অধিবেশনে খাগড়াছড়ি,¬ রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় থেকে আগত প্রতিনিধিরা বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, খুন-গুমের ঘটনা তুলে ধরেন এবং এসব অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার উপর জোর দেন।

কনভেনশনের সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, বান্দরবান জেলা সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা।

প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ও সারা দেশে অস্থির এক সময়ে ঢাকায় ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন খুবই গুরুত্ববহ। এই কনভেনশনের ওপর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের দৃষ্টি নিবন্ধ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ছাত্র-যুব-নারীসমাজ বর্তমান পরিস্থিতিতে কনভেনশন থেকে কর্মসূচি ও ঘোষণার প্রতীক্ষা করছে। দেশের সচেতন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদরা কনভেনশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কনভেনশনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাব, দাবিনামা-কর্মসূচি নিয়ে এলাকায় এলাকায় মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষকে সংগঠিত করতে হবে।

ইউপিডিএফ সভাপতি বলেন, আমরা যেটা করছি এটা কোন ঠাট্টা, ইয়ার্কি নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে যা যা করতে হয়, তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বেঈমান, বিশ^াঘাতক আছে। যারা ধর্মগুরু তাদের মধ্যেও বিশ^াসঘাতক ছিল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও খোন্দকার মোশতাক আহমেদ’র মতো বিশ^াসঘাতকরা ছিল। নান্যাচর, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও খাগড়াছড়িতে যা হচ্ছে তার প্রত্যেকটির পেছনে ইতিহাস আছে। নান্যাচরে এক সময় দাজ্যা ভূবন্যা ছিল। চবি’তে পিসিপি গঠন হওয়ার আগে সেই ৮৮ সালে সেনাদের লেলিয়ে দেয়া দুর্বৃত্তরা পাহাড়ি ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, সংগঠনের ফাইলপত্র ছিনিয়ে নিয়েছিলো। একটা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন স্তব্ধ করে দেয়া গেলেও, তার পরেই ’৮৯-এ বিশাল আকারে ছাত্র জাগরণের মাধ্যমে পিসিপি গঠিত হয়।

ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ফড়িং-এর মত নাচছে। তাদের এই নাচ বেশিদিন টিকবে না। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর অন্যায় জুলুম চালিয়ে ছাড়খার করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু লুঙ্গি-পরা খালি পায়ে গ্রাম বাংলার যুবকরা যুদ্ধ করে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিয়েছিল। বাঙালিদের কাছে পাকিস্তানি সৈন্যদের স্যারেন্ডার করতে হয়েছে।

তিনি ‘সত্য ও ন্যায়ের জয় অনিবার্য’ উল্লেখ করে বলেন, সত্য ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়, আর মিথ্যাকে নানা রং দিয়ে বারে বারে রূপ বদলিয়ে প্রচার করা হয়। এই কনভেনশনে যারা উপস্থিত, তারা সত্যের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমাদের নানা বাধা আসবে। সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা আর কাপুরুষের তালিকায় কারো নাম দেখতে চাই না, পরাজয়ের মুখ দেখতে চাই না। আমরা বিজয়ীর মুখ দেখতে চাই। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন দিনের সূচনা করতে চাই। অধিকার আমরা ছিনিয়ে আনবোই।

কনভেনশনে ৭ দফা রাজনৈতিক প্রস্তাব, দাবিনামা ও কর্মসূচি হাউজে উপস্থিত সকলে হাত উঁচিয়ে ও করতালির মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 2,064 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen