সিএইচটি টুডে ডট কম,খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি জেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে নাজুক স্বাস্থ্য সেবার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার লাখো বাসিন্দা। খাগড়াছড়ির জেলায় ছাড়াও রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার হাজারো বাসিন্দা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু হাসপাতাটিতে ১০০ শয্যা থাকলেও এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। ফলে খাগড়াছড়ি সদর সরকারি হাসপাতালে বেশীর ভাগ রোগীই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।
সরেজমিনে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ওয়ার্ডের বেডে জায়গা না থাকায় ফ্লোরিংয়ে স্থান হয়েছে রোগীদের। হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ঢাকা বা চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল হওয়ায় এখানকার সাধারণ প্রান্তিক মানুষের জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পায় না। হাসপাতালের ভর্তি হওয়া বেশীর ভাগ রোগীকে রেফার করা হয় ঢাকা বা চট্টগ্রামে। অনেক সময় সাধারণ রোগের জন্যও বাইরের হাসপাতালে রেফার করা হয়। দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই এমনটি করা হয় রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। জরুরী রোগীতে হাসপাতালে রোগীদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রামে রেফার করিয়ে দেয়।
সার্জারী,গাইনী বিভাগসহ সবকটি বিভাগে চিকিৎসকের সংকট আছে।মূলত চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের এই স¦াস্থ্য সেবার নাজুক পরিস্থিতি। বিদুৎ সংকট মোকাবেলায় অতীতে বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে জেনারেটর এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা হলেও তা অপর্যাপ্ত। সবকটি ওয়ার্ডে রোগীদের অপরিচ্ছন্ন বেড। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের গুনগত মান সম্পন্ন খাবার পরিবেশন করা হয় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী বলেন,‘দুপুর বা রাতের খাবার আমরা খেতে পারি না। শুধুমাত্র সকালের রুটি ,কলা বা ডিম খায়। ভাত ,সবজি,মাংসে এক ধরণে গন্ধ থাকায় খেতে পারি না।
’সরেজমিনে দেখা যায়,বেশীর ভাগই রোগীই হাসপাতাল থেকে দেওয়া খাবার খান না। আশে পাশের হোটেল বা অনেকে বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসে। হাসপাতালের মেডেসিন বিভাগে দুটি রুমে বেডের সংখ্যা মাত্র ১৭টি। কিন্তু হাসপাতালটি সবচেয়ে বেশী রোগী ভর্তি হয় এই বিভাগে। মেডিসন ওর্য়াডের দার্য়িত্বরত নার্স বলেন,‘এই বিভাগে বেশীর ভাগ সময় বেড সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়। বেডে জায়গা না থাকার ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীকে ফ্লোরিং করতে হয়।তীব্র শীতের রোগীদের ফ্লোরিং করায় অনেকে চিকিৎসা নিতে এসে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে দুই টি কক্ষ থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে মাত্র একটি ক্েক্ষ। কক্ষ থাকলেও বেড স্বল্পতা কারণে সার্জারী বিভাগে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীরা চট্ট্রগ্রামমুখী হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন মাত্র নার্স দিয়ে কোন রকমে চলছে। বাড়তি রোগী ভর্তি হলে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ রোগীদের অভিযোগ রয়েছে ,হাসপাতালে কতৃপক্ষ সামান্য অসুস্থতায় রোগীদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তরের অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই এমনটি করে। জেলার পানছড়ি থেকে একজন রোগীর এক স্বজন বলেন,‘কুপিয়ে মস্তিকে জখম করেছে আহতাবস্তায় হাসপাতালে আনতেই সাথে সাথে চট্টগ্রামে রেফার করে দেয়। মেডিকেলরা অফিসার এখানে রোগী রাখতে চায় না।’
এভাবে প্রায় রোগীকে চট্ট্রগ্রাম বা ঢাকায় স্থানান্তর করে হাসপাতারের চিকিৎসার দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় সামান্য কাটা ছেড়া,মাথা ফাটা রোগীকেও চট্টগ্রামের পাঠিয়ে দেয়। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের পর্যাপ্ত ওষুধের স্বল্পতা আছে। যৎসামান ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়। বেশীর ভাগই ওষুধ কিনে আনতে হয়।
খাগড়াছড়ির সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক(আরএমও) ডা:নয়নময় ত্রিপুরা বলেন,‘খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল বর্তমানে ১০০ শয্যার। তবে আগের ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে এটি চলছে।তবে ৫০টি শয্যা বাড়লেও বাড়েনি চিকিৎসক ,নার্সসহ অন্যান্য জনবল। আবার ৫০ জনবলেরও মধ্যে ৯ জন ডাক্তার সহ বেশ কটি গুরর্ত্বপূণ পদে জনবল সংকট আছে। বেশীর ডাক্তার পাহাড়ে এসে স্থায়ী হতে চায় না। জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি কাটিয়ে উঠা যাবে।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন অফিসার ডা: মো.শওকত হোসেন বলেন,‘১০০ বেড থাকলেও চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল আছে কেবল ১০০ বেডের,বাড়তি রোগীদের চিকিসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবে তরুণ ডাক্তাররা এখানে বদলী হয়ে আসার পর অনেক সময় পড়াশোনর জন্য এক থেকে দেড় বছরের জন্য আবার চলে যায়। এছাড়া পাহাড়ে কাজ করতে অনেক ডাক্তারের কিছুটা পাহাড় বিমুখতা কাজ করে।