রফিকুল আলম,সিএইচটি টুডে ডট কম,বান্দরবান। ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সাল। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ বছর পর হয়ে গেলেও পাহাড়ে এখনো সংঘাত বন্ধ হয়নি, ফিরে আসেনি কাঙ্খিত শান্তি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ি নেতারা বলছেন মৌলিক অনেক বিষয় বাস্তবায়ন করা হয়নি।
অনেক অগ্রগতি হয়েছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সংঘাত থামেনি। এখনো রক্ত ঝড়ে পাহাড়ে। চুক্তির পক্ষ বিপক্ষের চেয়ে পাহাড়ি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই এখন মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে পাহাড়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের নামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আগুনে রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জ্বললেও পাশ্ববর্তী আরেক পার্বত্য জেলা বান্দরবান অনেকটাই শান্ত থাকে সবসময়। ভৌগলিকভাবে রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি দুটি জেলার মাঝখানে বান্দরবানের অবস্থান। উত্তর-দক্ষিন হিসেব মিলালে দক্ষিণে বান্দরবান আর উত্তরে খাগড়াছড়ি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার অন্য দুই পার্বত্য জেলার চেয়ে সম্পূর্ন আলাদা বৈশিষ্ট্যের বান্দরবানে মারমা, চাকমা, ¤্রাে, বম, তঞ্চংগ্যা, চাক, খুমী, লুসাই, খেয়াং, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরাসহ পাহাড়ী বাঙ্গালী ১৪ টি সম্প্রদায় সহাবস্থানে রয়েছে।
আইনশৃংখলা বাহিনী এবং রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, জুম্ম জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারী পাহাড়িদের সংগঠন জনসংহতি সমিতি এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ধারাবাহিক সংঘাতে রক্তাক্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদগুলো।
পেছনের দিনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে যখন কথায় কথায় রক্ত ঝড়ছে তখনো শান্ত পার্বত্য জেলা বান্দরবান।
তথ্য মতে, সাংগঠনিকভাবে বান্দরবানে ইউ.পি.ডি.এফ’র চেয়ে জনসংহতি সমিতি অনেকটা শক্তিশালী। মোটামুটি জে.এস.এস নিয়ন্ত্রিতই বলা চলে। দাঙ্গা-হাঙ্গামাও নেই। কিন্তু তাই বলে ইউ.পি.ডি.এফ যে একেবারে ঘরে বসে থাকে তাও নয়। মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলে। তবে সহনশীল পর্যায়ে।
সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পূর্নবাসন প্রকল্পের রাবার বাগান এলাকার দখল নিয়ে জে.এস.এস – ইউ.পি.ডি.এফ শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটার অভিযোগও উঠে। আবার ইউ.পি.ডি.এফ সভাপতি ছোটন কান্তি তঞ্চংগ্যাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় জে.এস.এস সমর্থিতরা। সম্প্রতি অস্ত্রসহ আটকও হয়েছে জে.এস.এস এর একাধিক সদস্য।
ইউ.পি.ডি.এফ বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি ছোটন কান্তি তঞ্চংগ্যা বলেন, আমাদের সংগঠন দূর্বল নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাদের সংগঠন পাহাড়িদের অধিকার আদায়ের সংগঠন। আমরা কারো উপর হামলা করি নাই। কিন্তু তারপরও আমাদের উপর বিভিন্ন সময় জে.এস.এস হামলা করেছে। জেলায় বিভিন্ন সময় ইউ.পি.ডি.এফ’র ছয়জন নেতা-সমর্থককে হত্যা করেছে জে.এস.এস। আমরা সংঘাত চাইনা বলেই রক্তাপাত হচ্ছে না এখানে।
জনসংহতি সমিতির জেলা সম্পাদক ক্যবামং মার্মা বলেন, বান্দরবান জেলায় ইউ.পি.ডি.এফ- জে.এস.এস সংঘাতের কোন ঘটনা নেই। বান্দরবানে ইউ.পি.ডি.এফ’র সাংগঠনিক শক্তি দূর্বল হওয়াতে সংঘাত কম হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো বিশ্লেষনের সময় আসেনি।