শিরোনামঃ

অপারেশনের জন্য সরকারের সহযোগীতা চায় সোনার বুট জয়ী ফুটবলার চাথুইমা মারমা

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আমার বন্ধুরা যখন প্রতিপক্ষের জালে গোল দিতে পারে না তখন মন চায় মাঠে নামতে। মন চায় ফুটবল খেলতে। কিন্তু খেলতে পারি না। আমার খুব খারাপ লাগে। পায়ের চোট আরো বাড়বে এ ভয়ে স্যারেরা খেলতে নিষেধ করেন। ফুটবলের কথা বলতে বলতে আবেগাফ্লুত হয়ে পড়েন সোনার বুট জয়ী নারী ফুটবলার রাঙামাটির চাথুইমা মারমা। বর্তমানে তিনি rangamati-chathuima-pic-1রাঙামাটির জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণীর ছাত্রী।

চাথুইমা মারমা বলেন, দেশের হয়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে আমার পায়ের চোট লাগে। এরপর খেলা ঠেকে ছিটকে পড়ি। পায়ে চোট লাগার পর তার চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি বলেন, আমার পায়ের অপারেশন করা আমার পরিবারের পক্ষে কোনভাবে সম্ভব নয়। ফুটবল ফেডারেশন অথবা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেলে আমার পায়ের অপারেশন হবে। আমি তাদের সহযোগীতা চায়।

চাথুইমা খেলেন স্টাইকার পজিশনে। তার অসাধারণ ভুমিকায় বঙ্গমাতা ফুটবল প্রতিযোগীতায় রাঙামাটির ঘাগড়ার মগাছড়ি স: প্রা বিদ্যালয় ২০১১ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১২, ২০১৩ সালে তার দল রানার্স আপ হয়। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও চাথুইমা জিতেন সোনার বুট। পরে চাথুইমা ডাক পড়েন জাতীয় দলে।
২০১৪ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনুর্ধ-১৪ দলের বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন চাথুইমা। ২০১৫ সালে নেপালে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার আগে ঢাকায় জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পে অনুশীলনের সময় তা বাম পায়ে চোট পায় চাথুইমা। এরপর ফুটবল থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর থেকে পায়ের চোট নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যত দিন পার করছেন।
চাথুইমা বলেন, চোট পাওয়ার পরেও একটু ভাল হয়ে বল খেলেছি। চোট আরো বাড়ে। চোটে আঘাত লাগলে আমার খুব কষ্ট হয়। আঘাত লাগলে চারদিকে অন্ধকার দেখি। পুরনো চোটে আবার আঘাত লাগবে এ ভয়ে খেলা বন্ধ করি। স্যারেরাও খেলতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, অপারেশন হলে আমি খেলতে পারব।

সম্প্রতি এএফসি অনুর্ধ ১৬ নারী ফুটবল প্রতিযোগীতায় খেলোয়াড় ও সতীর্থ আনুচিং মগিনী, আনাই মগিনী, মনিকা চাকমা বলেন, আমরা চাথুইমার শূণ্যতা অনুভব করি। চাথুইমা ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। সে অসাধারণ ফুটবল খেলে। কিন্তু আহত হওয়ার পর থেকে সে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা যখন খেলি তখন সে মন খারাপ হয়ে বসে থাকে।তার সতীর্থরা বলেন, চাথুইমার চিকিৎসার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসা দরকার।
ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুভাষ চাকমা বলেন, চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন চাথুইমার পায়ের লিগামেন্ট ভাল করার জন্য শল্যচিকিৎসা (অপারেশ) করতে হবে। তা না হলে সে সুস্থ হবে না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অপারেশন করা দেরী হলে পরবর্তীতে অপারেশন আরো কঠিন হবে। যদি অপারেশন করা হয় তাহলে চাথুইমা পুরোপুরি সুস্থ হবেন এবং আবারও ফুটবল খেলতে পারবে। কিন্তু এ অপারেশনের জন্য অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু এ পরিমাণ অর্থ বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির কাছে নেই। চাথুইমা এর অপারেশনে ৩ লক্ষাধিক অর্থ প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের ফুটবল প্রশিক্ষক শান্তিমণি চাকমা বলেন, চাথুইমার বাড়ি জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বটতলী গ্রামে। গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায়। দারিদ্রতার কারণে তার পড়াশুনা শেষ হয়ে যাবে। তবে সে ভাল ফুটবলার হওযায় তাকে ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়া সুযোগ দেওয়া হয়েছে।rangamati-chathuima-pic-3

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুভাষ চাকমা বলেন, পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ও আর্থিক অসচ্ছল, মেধাবী ও খেলায় প্রতিভা আছে এমন ছাত্রীদের বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিচ্ছি। তাদের খাওয়ার খরচ স্থানীয়রা বহন করে। তবে চাথুইমার মত কেউ আহত হলে তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 348 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen