হিমেল চাকমা, বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম। গত শুক্রবার হয়ে গেল রাঙামাটি জেলা পরিষদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ছিল বহিরাগতদের ছড়াছড়ি। এই ছড়াছড়িতে পরীক্ষায় অংশ নিলেন স্বয়ং বরকল সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) সুমন দেব।
পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে সুমন দেবকে দেখে অবাক হলেও তার কোন অসুবিধা হয়নি। তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার রোল নম্বর ছিল ৪৪৩। পিতা বাবুল চন্দ্র দেব। সে বরকলের বাসিন্দা না হলেও ঠিকানা দিয়েছেন দোকান ঘাট, ভুষণছড়া ইউপি, বরকল। একই ঠিকানা পরিতোষ চাকমার রোল নম্বর ছিল ৪৪৪।
বরকল উপজেলা হতে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্য কাউকে পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য এটিইও এই কাজটি করেছে।
এই বিষয়ে সুমন দেব বলেন, আমি পরীক্ষা দিইনি। মানুষের মত মানুষ থাকে। নাম ও পিতার নামও মিল থাকতে পারে। কিন্তু সেটি আমি না। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি কোতয়ালী থানায় পুলিশের এসআই আনোয়ারের সাথে দেখা করতে গেছি। সে থানায় আসতে দেরী করায় আমি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে একটু ঘুরে এসেছি। সে সময় কিছু শিক্ষক আমাকে দেখেছে।
বরকল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি তোহিদুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে দেখে অবাক হয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার আপনি কেন এসেছেন? সে বলেছে এমনিতে। কিন্তু সে পরীক্ষা দেবে আমি কল্পনাও করিনি।
বরকল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আলতাব হোসেন বলেন, গতকাল (৪ আগষ্ট) আমি তাকে অনেকবার কল করেছি কিন্তু সে কল রিসিভ করেনি। হয়তো সে এই কাজ করেছে। কিন্তু এটি তো হওয়ার কথা না। সে এটিইও ছেড়ে কিভাবে শিশু শ্রেণীর শিক্ষক হতে চায়? তার পিতার নাম ঠিক আছে। কিন্তু তার বাড়ি তো চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। বরকলের আরেক এটিইও রাঙা মারমা বলেন, বরকলের অনেক শিক্ষক তার কাছে এই অভিযোগটি করেছেন। এটি খুব দু:খজনক।
জেলা পরিষদ সূত্র জানায় শিক্ষক নিয়োগের প্রবেশ পত্রে স্বাক্ষর করেছে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সদস্য সচিব নিয়োগ কমিটি আবু জাফর মো. সালেহ। তিনি বলেন, একজন এটিইও তো এই পরীক্ষায় পরীক্ষা দেওয়ার কথা না। তার উদ্দেশ্য কি ছিল তা তো জানার বিষয়।
জেলা পরিষদের নিযোগ বিজ্ঞপ্তির মতে জেলার ১০ উপজেলার মোট ৩২৫ টি শিক্ষক পদের মধ্যে বরকল উপজেলার শিক্ষক পদের সংখ্যা ছিল ৬২টি। এলাকাটি দুর্গম এবং স্থানীয় পরীক্ষার্থী সংখ্যা কম হওয়ায় অন্য উপজেলার পাশাপাশি বরকল উপজেলার বহিরাগতরা বেশী সুযোগ নিয়েছে। যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ছিল বহিরাগত।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক বরকল উপজেলার এক সরকারী চাকুরীজীবী বলেন, আমিও পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের কক্ষে যারা বরকলের বাসিন্দা নয় এবং যাদের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে পরিচয় তাদের ২২ জন শিক্ষক প্রার্থীকে দেখেছি। তারা কেউ বরকলের বাসিন্দা নয়।
পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত কমিটির আহবায়ক অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, এটিইও পরীক্ষা দিয়েছে! সেটা তো বিশ্বাস হওয়ার কথা না। আবেদনের সময় কাগজপত্র চাওয়া হয়নি। এর ফলে বহিরাগতরা সুযোগ নিয়েছে।
উল্লেখ্য রাঙামাটি জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকের ১০টি উপজেলার ৩২৫টি পদের জন্য রাঙামাটি জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের নিকট হতে গত ১৬ মার্চর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তবে স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণের কোন সনদের কথা উল্লেখ নেই। এই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষিকার শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ হয় এইচএসসি এবং শিক্ষকদের স্নাতক। এই বিজ্ঞপ্তির আলোকে প্রাপ্ত আবেদনপত্রগুলো নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। এই ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শনিবার সারাদিনজেলা পরিষদের মুল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। নিয়োগ করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। কিছুক্ষণ পর পর জেলা পরিষদের আশেপাশে মহড়া দিতেদেখা যায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের।