নিখিল কুমার চাকমা, চেয়ারম্যান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। যিনি একেধারে আওয়ামীলীগ নেতা, হেডম্যান ও জেলা পরিষদের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বাবা প্রয়াত তিলক চন্দ্র চাকমাও ছিলেন পাকিস্তান আমলে জেলা পরিষদের সদস্য এবং নানিয়াচর ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। নিখিল কুমার চাকমা দীর্ঘদিন ধরে নানিয়াচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সনে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে তিনি সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। এছাড়া তিনি ২০০১ সন থেকে বেতছড়ি মৌজার হেডম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সনের ২৫ মে তাকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে নিযুক্ত করা হয়। অদ্যবধি তিনি সে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি জেলা পরিষদের নানা বিষয় নিয়ে সিএইচটি টুডে ডট কম পরিবার থেকে আমরা তার সাথে কথা বলি। তিনি জানান, শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদের পদ মর্যাদা কি হবে সেটি উল্লেখ থাকলেও পার্বত্য জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সেটি উল্লেখ না থাকায় অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এছাড়া তিনি দাবী করেন বর্তমান সরকারের আমলে জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে পার্বত্য জেলা পরিষদ সকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করেছে। সাক্ষাতকারটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
উত্তর : ভালো।
প্রশ্ন : কেমন চলছে পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যক্রম?
উত্তর: ভালো চলছে। ২০০৯ সনে আমরা দায়িত্ব নেবার চেষ্টা করছি দল, মত পাহাড়ী বাঙ্গালী নির্বিশেষে সকলের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সমভাবে উন্নয়ন কাজ করার। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও চেষ্টার ত্র“টি নেই।
প্রশ্ন : জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছেন কিনা?
উত্তর: প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কিংবা দায়িত্ব পালন করতে গেলে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা থাকে, সে সব নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়। প্রতিবন্ধকতা পিছনে ফেলে সামনে চলতে পারলেই সার্থকতা পাওয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রশাসন রয়েছে যেখানে সমন্বয়টা জরুরী অথচ মাঝে মাঝে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা পাই না। তারপরও নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে জেলা পরিষদের কর্মকান্ডকে গতিশীল করেছি।
প্রশ্ন: গত ৫ বছরে আপনারা কি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করেছেন?
উত্তর: এখানে ভিন্ন জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। গত ৫ বছরে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠী পাহাড়ী বাঙ্গালী নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করেছি। যখন যাদের যা দরকার ছিল তা করে দিয়েছি তবুও মানুষের চাহিদার শেষ নেই জনগনের চাহিদা পুরনে আমাদের চেষ্টারও ক্রুটি নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ ব্রীজ কালভার্ট, মসজিদ, কিয়াং ইত্যাদি নির্মান করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যালেরিয়া জোন হিসেবে পরিচিত আমরা গত ৫ বছরে ইউএনডিপি সিএইচটিডিএফ এবং এনজিও ব্রাকের সহায়তা রাঙামাটি জেলাকে ম্যালারিয়ায় শুন্য কোটায় নিয়ে এসেছি। কৃষিতে আমরা কৃষকদের চাষাবাদ করতে বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছি। শিক্ষা খাতে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল বেশী, শিক্ষার আলো যদি আমরা ছড়িয়ে দিতে না পারি তাহলে আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ব। আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভবন নির্মানের পাশাপাশি দুর্গম এলাকায় শিশুরা যেন প্রাথমিক স্তরে পড়া শোনা করে সেদিকে দৃষ্টি রেখেছি। আমাদের আমলে আমরা জেলা পরিষদের বিভিন্ন হস্তান্তরিত বিভাগে এবং ইউএনডিপির বিভিন্ন প্রকল্পে দেড় হাজার শিক্ষিত লোককে চাকুরি দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। গত ৫ বছরে পার্বত্য জেলা পরিষদ শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে যার অংশীদার রাঙামাটির জনগন।
প্রশ্ন: সরকার থেকে যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ বা বাজেট আপনারা পান তাতে কি একটা জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়?
উত্তর : আমরা সরকার থেকে যে পরিমান অর্থ বরাদ্দ পাই তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল তারপরও কিছু করার থাকে না। কারন আমরা যা বরাদ্দ পাই তা পার্বত্য মন্ত্রনালয় তাদের বাৎসরিক বরাদ্দ থেকে আমাদের প্রদান করে। এর একটি বড় অংশ খরচ হয় সংস্থাপন খাতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সরকার থেকে যে বরাদ্দ পায় সেখান থেকে ৩ পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, আঞ্চলিক পরিষদ, এলজিইডি এবং বিদ্যুৎ বিভাগসহ নানা বিভাগে দেয়া হয় তাই মন্ত্রনালয়েরও কিছু থাকে না। পার্বত্য মন্ত্রনালয় চলতি বছর মৎস্য উন্নয়ন কল্পে ৬৬ কোটি টাকা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, পর্যায়ক্রমে এর অর্থ ছাড় করা হবে এতে করে মৎস্যজীবিরা উপকৃত হবে। পার্বত্য এলাকার বিদ্যুৎ এর জন্য ১৬৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। জেলা পরিষদ বরাদ্দ অপ্রতুল হলেও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার ফলে এখানে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
প্রশ্ন: পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদ মর্যাদা নির্ধারন না হওয়া আমরা দেখি প্রশাসনিক কর্মকান্ডে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বিষয়টি নিরসনে সরকারের কাছে কি দাবী জানিয়েছেন?
উত্তর : পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে চুক্তির ফলে সৃষ্টি নানা উন্নয়ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পদ মর্যাদা কি হবে তা উল্লেখ থাকলেও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদ মর্যাদা কি হবে তা উল্লেখ না থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পুর্বেকার চেয়ারম্যানদের নিয়মে সকল সুবিধা ভোগ করলে বিগত সময়ে সংস্থাপন মন্ত্রনালয় থেকে পদবী ব্যবহার না করার কথা বলা হলেও বাতিল করা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি সুরাহা করে আমাদের পদ মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়ার অথবা নির্ধারন করার দাবী জানালেও এখন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমাদের মাঝে মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় সেটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টির প্রতি সুনজর দিবেন।
প্রশ্ন: বিভিন্ন মহল থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচনের দাবী উঠেছে, আপনি কি মনে করেন জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত?
উত্তর: হা, আমি মনে করি পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিত। জেলা পরিষদ নির্বাচন হলে জনগনের প্রতি পরিষদের দায়বদ্ধতা আরো বাড়বে। পরিষদের কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে। আমরা অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদের দায়িত্ব পালন করছি আমরাও চাই জেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আসুক।
প্রশ্ন: আপনাদের সরকারের ৫ বছরের শাসন আমলে বা আপনি দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পরিষদের নিয়োগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বির্তক উঠেছে বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
উত্তর : অভিযোগগুলো সত্য নয়। গত ৫ বছরে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সকল নিয়োগ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা ৩৮ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি কিন্তু এর বিপরীতে ১৭৬০জন আবেদন করেছে। এত আবেদনকারীদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ৩৮জনকে নিয়োগ দিয়েছি। সরকারের নিয়ম নীতি অনুসরন করে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় নিয়োগ কমিটি থাকে এবং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি থাকে তারাই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন। তবে সব সময় বঞ্চিতদের সংখ্যা থাকে বেশী তাই তারা ক্ষোভ বা হতাশা থেকে এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা আরো বলেন, পরিষদ চালাতে গিয়ে সবার মন রক্ষা করা সম্ভব হয় না, তবুও আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্চতা ও জবাবদিহীতার বজায় রেখে সকল সম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করতে। এক্ষেত্রে ধর্ম বর্ন জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আগামী শনিবার দেখুন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব) মণীষ দেওয়ানের না বলা কথ।