মহান ত্যাগ আর কোরবানির মহিমায় ভাস্বর মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা কাল সোমবার। আল্লাহপাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রতি বছর পশু কোরবানি দিয়ে থাকে সারা বিশ্বের মুসলমানরা।
কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি ঈদের অন্যান্য প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। এখন শুধু কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তাই ঘরে ঘরে বইছে আগাম আনন্দের বন্যা।
এই ঈদে চাঁদ দেখা নিয়ে ঈদুল ফিতরের মতো আগের দিনের দোদুল্যমানতা নেই। আগেই নির্ধারিত হয়েছে ঈদের তারিখ। ৬ অক্টোবর সোমবার ১০ জিলহজ। আরবী মাসের এদিন সারা বিশ্বে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। এ হিসেবে শনিবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান আছে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন, কোরবানির পশুর রক্ত কিংবা মাংস কিছুই তাঁর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কোরবানিদাতার পরহেজগারি ও সদিচ্ছা- মহান রবের প্রতি বান্দার আনুগত্য। যে পবিত্র ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতি বছর ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়, এর সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর একমাত্র ছেলে হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার নির্দেশ পান। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইব্রাহিম (আ.) একমাত্র ছেলেকে কোরবানি দেয়ার উদ্দেশ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিবছর আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ আল্লাহপাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি দিয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়।
হাদিসে এসেছে, ঈদুল আজহায় কোরবানি করা সব নেক কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কোরবানির পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান লোকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যাকাত পরিমাণ মাল থাকলে কোরবানি দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমার মুসাল্লায় (ঈদের জামাতে) না আসে।’
ঈদের দিন সকালে নিজ নিজ এলাকার ঈদগা ময়দানে দলবেঁধে মুসল্লিরা দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে যাবেন। ইমাম বা খতিব ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে খুতবা পাঠ করবেন। ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে এক সঙ্গে নামাজ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে। নামাজ শেষে প্রিয় স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে যাবেন অনেকেই। ঈদের আনন্দের দিনেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া প্রিয় স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অশ্রুসজল কণ্ঠে প্রার্থনা করবেন তারা। এরপরই শুরু হবে পশু কোরবানি।
বরাবরের মতো এবারো ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদপত্র। টেলিভিশন ও বেতার থেকে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঈদের দিন দেশের সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র ও সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ও পবিত্র এই দিনটি পালনের জন্য যার যার সাধ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। কেউ সম্মিলিতভাবে কেউ বা একা সামর্থ্য অনুসারে কুরবানী দিচ্ছেন। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল সিএইচটি টুডে ডট কমের পক্ষ থেকে দেশবাসীসহ সকল পাঠক, শুভাকাঙ্খী, বিজ্ঞাপনদাতা এবং সহকর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। পবিত্র ঈদুল আযহা জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সকলের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসুক এটাই কামনা করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম হোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম নির্দশন। সবাইকে আবারো ঈদ মোবারক।
September 11, 2016 at 8:15 pm
Thanks