ফজলুর রহমান রাজন, সিএইচটি টুডে ডট কম,রাঙামাটি। পার্বত্য চট্রগ্রামে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠী চাকমা, মার্মা ত্রিপুরাসহ ১১টি ভাষা ভাষির জনগনের বসবাস। তাদের রয়েছে ভিন্ন ধারার শিল্প সংস্কৃতি ও ভাষা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ তাত্বিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। আদিবাসী নেতারা ও তাদের কোমলমতি শিশুরা সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন প্রাথমিক স্তরে পাঠ্য বইয়ে মাতৃভাষার বিষয়টি অšতৃভুক্ত করতে তাহলে তারা মাতৃভাষা লিখতে ও শিখতে পারবে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষা হলেও বাংলার পাশাপাশি নিজের ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে না পারায় শিশুরা প্রাথমিক স্তর থেকে ঝড়ে পড়ে যায়। ঝড়ে পড়া রোধে ক্ষুদ্র নৃ তাত্বিক জনগোষ্ঠীর সাধারন মানুষ প্রাথমিক স্তরে বাংলার পাশাপাশি মাতৃভাষায় পাঠদান চালুর দাবী জানিয়েছেন। পার্বত্য চট্রগ্রামে বিভিন্ন এনজ্ওি কাজ করলেও মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে কেউ অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে না এমনও অভিযোগ রয়েছে। যে সব এনজিও কাজ করছে তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ছাত্র ছাত্রীদের মাতৃভাষা লেখা পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। শান্তি চুক্তিতে জেলা পরিষদগুলোকে এসব বিষয়ে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তারা সেটি পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আদিবাসী শিশুদের জন্য এখনো লিখিত ভাষা বই রচিত হয়নি কেবল চাকমা, মার্মা ও ত্রিপুরা ভাষায় বই বের হয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতা না থাকায় কেউ নিজস্ব অর্থায়নে বই প্রকাশে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না। শিশূ শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত কারিকুলামে অধ্যায়নরত ছাত্র ছাত্রীদের জন্য মাতৃভাষায় বই প্রকাশ করলে এবং সেটি পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করতে ঝড়ে রোধ করা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করছেন। শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদ হস্তান্তরিত হলেও প্রাথমিক স্তরে ক্ষুদৃ নৃ গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষার বিষয়ে জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের অর্ন্তভুক্ত না থাকায় জেলা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছে না। রাঙামাটি শহরের মোনঘরসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শ্রেনী কক্ষে মাতৃভাষা পাঠদান করলে তাদের পড়তে ও বুঝতে সহজ বলে জানিয়েছে।
রাঙামাটি শহরের অবস্থিত মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক খোকন কান্তি বড়–য়া জানিয়েছেন, মাতৃভাষার উপর যে পাঠদান হয় তা বিভিন্ন এনজিও থেকে ৬ মাস বা ১ বছরের জন্য হয় এটা যদি চলমান থাকে তাহলে ভালো হয়। তিনি বলেন ঝড়ে যাওয়া রোধ করার জন্য শিশু থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত মাতৃভাষা চালু করা দরকার।
সমাজকর্মী এডভোকেট সুঞ্চমনি চাকমা বলেছেন মাতৃভাষায় লিখাপড়ার অধিকারটা সার্বজনিন মানবিধকার। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদ আইনে বলা হয়েছে মাতৃভাষায় লেখা পড়া এবং সংস্কৃতি রক্ষায় নিজেরাই প্রবিধান প্রনয়ন করতে পারবে কিন্তু তারা তা করছেন না। কমপক্ষে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত যদি মাতৃভাষা চালু করা না হয় তাহলে কালক্রমে ভাষাগুলো হারিয়ে যাবে।
উন্নয়নকর্মী তনয় দেওয়ান বলেছেন, জেলা পরিষদগলো স্কুল সম্প্রসারন ও উন্নয়ন কাজে যতটুকু মনোনিবেশ করেন তার পাশাপাশি সকল ভিন্ন ভাষাভাষির জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোকে পাঠদানের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার কথা এ বিষয়ে নীতি কৌশল এবং প্রশিক্ষনের বিষয়টি অবহেলিত রযে গেছে। ভাষাগুলোকে হারিয়ে যাওয়া ও বিপন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষায় পাঠদান করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেছেন ৬০ শতাংশ প্রাথমিক স্তর থেকে ঝড়ে পড়ে যায়। ১১টি আমরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আছি যাদের প্রত্যোকের ভাষা ও সংস্কৃতি আলাদা এই ভাষাগুলো অত্যন্ত প্রয়োজন। ঝড়ে যাওয়া রোধ করতে হলে প্রাথমিক স্কুল টেক্স বোর্ডের কারিকুলামে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। তাহলে মাতৃভাষা শিখার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আসবে। জেলা পরিষদ ইতিমধ্যে মাতৃভাষা সংরক্ষনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।