সিএইচটি টুডে ডেস্ক। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সাবেক উপদেষ্টা এবং দুটি দলের ৫জন করে ১০জনকে নিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠন করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন আমার প্রস্তাব, সরকারি ও বিরোধীদলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত নাগরিককে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। আমি আশা করি শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাব গ্রহণ করবেন।”
খালেদা জিয়া বলেন আমি আশা করি, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে দ্রুত আলোচনার কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যও আমি তার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “আপনারা জানেন এবং আমি নিজেও বুঝি যে, পরিবর্তনের কথা কেবল মুখে বলাই যথেষ্ট নয়। কেননা এদেশের জনগণ অতীতেও পরিবর্তনের অঙ্গীকার রাজনীতিকদের কণ্ঠে শুনেছে। সে কারণে আজ আমি আপনাদের মাধ্যমে খুব স্পষ্ট করে একটি কথা বলে এই পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটাতে চাই। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা রকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেবো না।”
তিনি বলেছেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক দুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই দুটি সরকারের উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সব মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনে একবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আমি প্রস্তাব করছি, ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন। তারাই আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হবেন।
খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবে বলেন, বর্তমান সংসদ ভেঙে যাবার আগে প্রয়োজন বোধে ওই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচিত করে দিতে পারে। সংসদ যেভাবে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যদের নির্বাচিত করে থাকে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই রূপরেখা দেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এ সম্পর্কে বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তার ভাষণেও আমার, আমার সরকার, দল, পরিবার ও রাজনৈতিক কার্যালয় সম্পর্কে অনেক কুৎসা রটিয়েছেন। আমি এর পাল্টা বক্তব্য দিতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী, তার পরিবারের সদস্যবর্গ ও আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কে বিস্তার অভিযোগ ও তথ্য থাকা সত্বেও আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। বাংলাদেশের সুরুচিবান মানুষ আর এসব শুনতে চান না। আমাদেরকে এই অপ-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদেরকে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষঅর আলোকে, সময়ের দাবি অনুযায়ী নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তন করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী কেবল নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিরোধীদলের পরামর্শ চেয়েছেন। তার এ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে। আমি এখনো মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা করা দরকার। এবং সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল। সে জন্য বিএনপি ও ১৮ দলের পক্ষ থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষঅর আলোকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে উপস্থাপন করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এমকে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সারোয়ারি রহমান, লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিগ্রে. জেনা. অব. আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরপ্রতিক, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসির উদ্দিন আহমেদ, ড. ওসমান ফারুক, এডভোকেট জয়নুল আবেদিন, এনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এড. মাহবুব হোসেন, আবদুল আওয়াল মিন্টু, এড. আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক প্রমুখ।