আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এটি জাতির গৌরবের ও আত্মমর্যাদার দিন। ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। হাজার বছরের বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একদিনে হঠাৎ করে, বিশেষ কোনো মুহূর্তে এই বিজয় অর্জিত হয়নি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় নয় মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে।
প্রত্যেক জাতিরই গর্ব করার কিছু বিষয়ের পাশাপাশি কিছু গভীর ক্ষত ও গ্লানি থাকে। বাঙালি জাতির গর্ব করার প্রধানত দুটো জায়গা_ বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য রাজপথে রক্তদান এবং একাত্তরে চরম ত্যাগ ও রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। আর অত্যন্ত গ্লানিময় অধ্যায় হচ্ছে দুই লাখেরও বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমহানি। ওই দুঃসহ স্মৃতি স্মরণে এলে সচেতন বাঙালি মাত্রই বেদনায় কুঁচকে যায়, চোখের কোণে পানি আসে। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর ৪৪ বছর আগের এই দিনে আসে চূড়ান্ত বিজয়। যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে, কেড়ে নেয় দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, সেই অস্ত্র তারা পায়ের কাছে রেখে নতজানু হয়ে একাত্তরের এ দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। আত্মপরিচয়ের ঠিকানা খুঁজে পায় বীর বাঙালি।
তাই কৃতজ্ঞ জাতি আজ দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে একাত্তর সালে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। নতচিত্তে স্মরণ করবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের।
এদিকে রক্তক্ষয়ী সেই স্বাধীনতার সংগ্রামে যারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে হাত মিলিয়েছিল ঘাতক পাকহানাদারদের সঙ্গে, সেই রাজাকার-আলবদর ৪ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পাশাপাশি বেশ ক’জনের বিচার চূড়ান্ত হওয়ায় বাঙালি জাতির কলঙ্কের দায় মুক্তির সূচনা ঘটেছে। জাতির বিজয়ের আনন্দে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।