সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, সরকার শান্তি চুক্তি নিয়ে মিথ্যাচার করছে, চুক্তি অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। বস্তুত গত ৫ বছরে কিছু প্রতিষ্ঠানের রদ বদল ছাড়া চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোতে সরকার হাত দেয়নি। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি সফরকালে নৌকা ভোট দিলে চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে বলে ঘোষনা দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৬তম বর্ষপুর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা আরো বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে চুক্তির ৭৮ ধারাটি ধারার মধ্যে ৪২টি ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে যে দাবী সরকার করছে সেটি চরম মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ আইন হলেও সেগুলো কার্যকর করা হয়নি। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন- আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ (স্থানীয়), ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, মাধ্যমিক শিক্ষা, বন ও পরিবেশ, স্থানীয় পর্যটন, জুমচাষ ও পরিসংখ্যান হস্তান্তর করা হয়নি। পার্বত্য এলাকার ভুমি কমিশন আইন সংশোধনের কথা থাকলেও সরকার তা করেনি।
সন্তু লারমা আরো অভিযোগ করে বলেন, সরকারের ছত্রছায়ায় ইউপিডিএফ নামধারী সন্ত্রাসীরা পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে পাহাড়ের পরিবেশকে অশান্ত করে তুলছে। প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ির জনসভায় ইউপিডিএফ বাঁধা সৃষ্টি করলে প্রধানমন্ত্রী তাদেও দেখে নেয়ার হুমকি দিলেও বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
সন্তু লারমা বলেন, প্রশাসনের একটি বিশেষ মহলের ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সংস্কারপন্থী নামে খ্যাত বিপথগামী গোষ্ঠী অবাধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ইত্যাদি সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। যার অন্যতম আলোচিত ঘটনা হলো গত ১৬ ফেব্রƒয়ারী ২০১৩ রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলা থেকে অস্ত্রের মুখে ৭ নারী ও শিশুসহ জনসংহতি সমিতি ও সমিতির অঙ্গ সংগঠনের ৬২ জন সদস্য ও সমর্থককে অপহরণ। অতি সম্প্রতি গত ২১ নভেম্বর ২০১৩ বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজক এলাকায় বিজিবি ক্যাম্পের সন্নিকটে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে জনসংহতি সমিতির দু’জন সদস্যসহ তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এযাবৎ এই চুক্তি বিরোধী সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির ৯৩ জন সদস্যসহ তিন শতাধিক লোককে খুন ও শত শত নিরীহ লোককে অপহরণ ও নির্যাতন করে। সরকারের নির্লিপ্ততা তথা প্রকারান্তরে প্রত্যক্ষ মদদদানের কারণে সংস্কারপন্থী-ইউপিডিএফ এভাবে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, মহিলা সমিতির সভাপতি জরিতা চাকমা, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য থৈ ম্রা চিং মারমা উপস্থিত ছিলেন।
সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ করে সন্তু লারমা আরো বলেন, দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সরকার যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি যে কোন সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য যে কোন পরিস্থিতির জন্য সরকার তথা এদেশের শাসকগোষ্ঠীই দায়ী থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরও বিগত পাঁচ বছরে চুক্তি বাস্তবায়িত না করে মিথ্যা প্রতিশ্র“তি দিয়ে গেছে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আপামর পার্বত্যবাসী সরকারের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে বলেও উল্লেখ করেন সন্তু লারমা।
সন্তু লারমা আরো বলেন, এখনো চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ত হয়নি, জেলা পরিষদে সকল বিষয় হস্তান্তর করা হয়নি। অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়নি।