সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন সংস্থা বেশী, তাই উন্নয়নে সমন্বয়হীন, ওভারলেপিং, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ ও
অনিয়মের অভিযোগ পুরানো। পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা, এলজিইডিসহ সরকারের একাধিক উন্নয়ন সংস্থা থাকায় যে যার মত করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে কাজের মেয়াদ দীর্ঘ করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব উন্নয়ন পরিকল্পনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় বছরের পর বছর কাজ শেষ হয় না, তেমনি কাজের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্নও দেখা দেয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাস্তবায়িত অগ্রগতি প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্ট্রগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা (কোড নং ৭০২০) এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রতিবেদনে অবকাঠামো উন্নয়ন সেক্টরে ১ নম্বরে দেখানো হয়েছে সদর উপজেলা হেডম্যান এসোশিয়নের কার্যালয় নির্মানের জন্য ওই অর্থবছরে (২০১৩-১৪ অর্থ) ৬লাখ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ ও ব্যয়ের খাতায়ও ৬লাখ টাকা দেখানো হয়েছে পাশাপাশি কাজের বাস্তত অগ্রগতি শতকরা ৬০ পার্সেন্ট দেখানো হয়েছে। কিন্তু সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভিত্তি প্রস্তর ছাড়া আর কিছু করা হয়নি। যেখানে সর্বোচ্চ ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে, সেখানে ৬লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। গত অর্থ বছর গিয়ে চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছর শেষ হলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি।
জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, যুবলীগের সাবেক এক নেতার সাথে জায়গা নিয়ে বিরোধের কারনে কাজের অগ্রগতি হয়নি, তবে নতুন অর্থ বছরেও হেডম্যান এসোশিয়নের নামে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মান করা হবে সেখানে জায়গার বিরোধ নিষ্পত্তি না করে টেন্ডার করা অর্থের অপচয় বা দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নয় বলে অনেকে মনে করছেন।
সদর উপজেলা হেডম্যান এসোশিয়নের কার্যালয় নির্মানের কাজটি পেয়েছেন পারমী এন্টারপ্রাইজের মালিক কিরন ধর চাকমা। যিনি একাধারে ঠিকাদার আবার সরকারি চাকুরি (স্বাস্থ্য বিভাগে) করেন। রাঙামাটি জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে তার ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিপরীতে অন্য ঠিকাদাররা লাখ লাখ টাকার কাজ করছেন।
বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেলা হেডম্যান এসোসিয়নের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা জানান, হেডম্যান এসোশিয়নের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০শতক জায়গা বরাদ্দ দিলেও মুজিব নামে একজন তার জায়গা দাবি করে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আনলে কাজ আপাদত বন্ধ হয়ে যায়। তবে যার নামে বন্দোবস্তীর আবেদন করা ছিল ওই ব্যাক্তি জীবিত নেই তিনি মারা গেছেন, তার কোন ওয়ারিশও এখানে নেই। আমরা চেষ্টা করছি কাজটি শুরু করতে, তবে ঠিকাদারের বিলের ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পারমী এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ নেয়া ঠিকাদার কিরন ধর চাকমাকে ফোনে বিল উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।
কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানান, আমি দায়িত্ব নিয়েছি বেশীদিন হয়নি, জায়গার বিরোধের কারনে ঠিকাদার কাজ করতে পারেনি। জায়গার সমস্যার সমাধান হলে কাজ শুরু করা হবে। কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয়ে তিনি খোজ কবর নিবেন বলে জানান।
অন্যদিকে নবগঠিত এপ্রিল মাসে নবগঠিত জেলা পরিষদ সদস্যদের বসার কক্ষ বরাদ্ধ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যেখানে ভবন স্থাপন করাই আছে শুধু ঠিকাদার রুমের কাজ করবে সেখানে টেন্ডার ছাড়াই ৪০ লাখ টাকার কাজ ৮০ লাখ টাকায় এক যুবলীগের নেতাকে দেয়া হয়েছে।