শিরোনামঃ

৩০ এপ্রিলের মধ্যে আবারো শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের রোড ম্যাপ চাইলেন সন্তু লারমা, অন্যথায় আন্দোলন

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র SAM_7003বোধি প্রিয় ওরফে সন্তু লারমা সরকারকে আবারো পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সময় সুচী ভিত্তিক রোড ম্যাপ ঘোষনার আহবান জানিয়েছেন, অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ যে কোন কঠিন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত আছে বলে হুশিয়ারি উচ্ছারন করেছেন।
আজ শুক্রবার সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১০ম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দোশ্য করে বলেন, অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করুন। সময়সূচিভিত্তিক চুক্তি বাস্তবায়নের কর্মসূচি ঘোষণা করুন। অন্যথায় দাবি আদায়ে জনসংহতি সমিতির পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিলের পর কঠিন ও তীব্রতর সংগ্রামে যেতে বাধ্য হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা যে কোনো কঠিন সংগ্রামে প্রস্তুত।
সকাল ১০টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জনসংহতি সমিতির তিন দিনব্যাপী দশম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির অন্যতম নেতা ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবী লতা চাকমা। এছাড়া সমিতির সহসভাপতি ও রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক প্রণতি বিকাশ চাকমাসহ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমা, সংস্কৃতিকর্মী শিশির চাকমা ও রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা। জলিমং মারমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা।
ক্ষমতাসীন দলে জড়িত পাহাড়ি নেতাকর্মীদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তাদের উদ্দেশে সন্তু লারমা বলেন, সময় থাকতে শাসকগোষ্ঠীর জুম্ম স্বার্থবিরোধী, উগ্র জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদ, সামন্তবাদ, উপেনিবেশিক শাসন এবং জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ধংস করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে দল ছেড়ে আসুন। পার্বত্য চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিন। সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে আমরা অধিকতর কঠিন আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। সেই আন্দোলনে বিরোধিতা করলে তখন জনরোষ থেকে কীভাবে বেরিয়ে যাবেন সেই পথ খুঁজে পাবেন না।
সরকারের উদ্দেশে সন্তু লারমা আরো বলেন, আমরা আগে বলে দিয়েছি আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সময়সূচিভিত্তিক পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে ১ মে থেকে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে যেতে বাধ্য জুম্ম জনগণ। আমরা আশা করি সরকার এগিয়ে আসবে। এখনও সময় আছে। অচিরেই চুক্তি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। আমরা কঠিন বাস্তবতার দিকে যেতে চাই না। কিন্তু সরকার এগিয়ে না এলে জুম্ম জনগণকে যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে যেতে বাধ্য হতে হবে। কাজেই আমাদের সেই পরিস্থিতিতে যেতে বাধ্য করবেন না। আমরা সংখ্যায় কম। কিন্তু অধিকারের জন্য মৃত্যুকে জয় করেছি। মৃত্যুকে ভয় পাই না। কারণ অধিকার ছাড়া মৃত বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। জনসংহতি সমিতির জন্ম জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে। এ পর্যন্ত অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছি। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব।

সরকারের কর্মকান্ডে তীব্র সমালোচনা করে সন্তু লারমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী এখনও ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলের আদলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ওপর শাসন নিপীড়ন, নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামি অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন উপস্থিতি ও সেনা কর্তৃত্ব বজায় রাখা হয়েছে। এ সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায় না। এজন্য আন্তরিক নয়। কোনো সদিচ্ছা নেই। সরকার শুধু জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ধংস করে দিতে মরিয়া। শাসকগোষ্ঠীর মদদে পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের জন্ম। ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসে মেতেছে। অথচ সরকার নির্বিকার। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে জুম্ম জনগণকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ ও তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করে দিয়ে ইসলামি সম্প্রসারণ ঘটাতে চায় সরকার।

জাতীয় সংগীত এবং দলীয় সংগীতের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ১০ম জাতীয় সম্মেলনে শুরু হয়।
সম্মেলনে ৩ পার্বত্য জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা যোগ দেন।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 1,235 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen