সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে রাজবন বিহার এলাকাসহ রাঙামাটি শহর।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। বেলা আড়াই টায় সূত্রপাঠ করে বেইনঘর উদ্বোধন করেন মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শিষ্যমন্ডলী। এ সময় রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, শ্রীমৎ ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির, শ্রীমৎ জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবিরসহ রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুসংঘ। পরে বিকাল তিনটায় ফিতা কেটে বেইনঘরের চরকায় সুতাকাটা উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়।
মহামতি গৌতম বুদ্ধের মহাপুণ্যবতী উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাজবন বিহারে আয়োজিত ৪০তম কঠিন চীবর দানোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ছাড়াও উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি গৌতম দেওয়ান, নিরুপা দেওয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় চরকায় সুতা কেটে বেইন বুনন উদ্বোধন করেন।
এদিকে রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে মুখর পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। অনুষ্ঠানে সড়ক ও নৌপথে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন আদিবাসী গ্রাম ও জনপদ থেকে এসে হাজার হাজার সদ্ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ সমবেত হন। এছাড়া দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। উৎসবে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে। বসানো হয়েছে মেলা। এছাড়া ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনন, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ফানুস উত্তোলণ, কল্পতরু শোভাযাাত্রাসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন গৃহীত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শুরু দুই দিনের উৎসব শেষ হবে আজ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা চীবর উৎসর্গের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ মহাপুণ্যযজ্ঞ। রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ বৌদ্ধ আর্যপুরুষ সর্বজনপূজ্য মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উদ্দেশ্যে দান করা হবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি চীবর।
রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ বলেন, পরমপূজ্য বনভান্তের এক স্বর্গীয় অনুভুতি থেকে সর্বপ্রথম রাজবন বিহারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা বের করে কাপড় বুনন ও রঙকরণ শেষে দানকার্য সম্পাদন করা হয়। এবার ৪০তম উৎসব হচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজবন বিহার ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ মহাদানযজ্ঞ সম্পাদন হয় না।
শুক্রবার বনভান্তের প্রতিকৃতিতে চীবর দানের মাধ্যমে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান শেষ হবে।
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) দানকার্য সম্পাদন করেন।