শিরোনামঃ

রাঙামাটি রাজবনবিহারে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর অংশগ্রহনে শেষ হলো কঠিন চীবর দান উৎসব

সিএইচটি টুডে কম, রাঙামাটি। শুক্রবার রাঙামাটি রাজবনবিহারে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর অংশগ্রহনে শেষ হলো ২ দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে গত দুইদিন রাঙামাটি শহর ছিল উৎসবের নগরী এই ধর্মীয় উৎসব ছিল যেন পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলা। তবে বৌদ্ব ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় গুরু শ্রীমৎ সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের পরলোক গমন করায় এবার পুন্যার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় কম ছিল। Rangamati kothin chibor-1
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সুতা কাটা থেকে বুনন শুরু করে চীবর তৈয়ার শেষে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রতিকৃতিতে চীবর উৎসর্গ করার মাধ্যমে দান কার্য সম্পাদন করে। এর পর আনুষ্ঠানিকভাবে চীবর দান অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে রাজ বনবিহার উপাসক-উপাসিক পরিষদের পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিটির সহ সভাপতি গৌতম দেওয়ান।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানকালে রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন এই কঠিন চীবর দানের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের জুম চাষের প্রথার মাধ্যমে জুমের যে তুলা রয়েছে তা থেকে সুতা তৈরী করে চীবর তৈরী হয় থাকে এতে আমাদের বৌদ্ধ ধর্মীয় কৃষ্টি সংরক্ষন হচ্ছে অন্য দিকে পার্বত্য এলাকার জুমিয়াদের কৃষ্টিও সংরক্ষন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন এ কঠিন চীবর দানের মধ্য দিয়ে শান্তির প্রতি শ্রদ্ধা ও গভীরতা বৃদ্ধি পায় এবং সকলেই সংকল্পবদ্ধ হয়ে সকল প্রকারের হানাহানি ও হিংসার অবসানের মধ্য দিয়ে যাতে এ অঞ্চলে ও সারাদেশে সত্যিকার অর্থে জনমূখী ও পরিবেশমূখী উন্নতি আনতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে আদিবাসীদের কৃষ্টি কালচার ধরে রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহবান জানিয়ে ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় আরো বলেন, এ সংঘাত জুম্ম জনগনকে অনেক পিছিয়ে দিচ্ছি তাই অবিলম্বে বিবদমান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সংঘাত বন্ধের আহবান জানান।SAM_2445
অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা,জেলা বিএনপির সভাপতি এড. দীপেন দেওয়ান। এছাড়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো, সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল মণীষ দেওয়ানসহ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেন, বৌদ্ধের অহিংসার বানী আমাদের বাস্তব জীবনে মেনে চললে হানাহানি, খুন রক্তপাত থাকবে না। দেশে শান্তি বিরাজ করবে অস্থিরতা কমবে। আমাদের সবার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা উচিত।
অনুষ্ঠানে দেশনা দেন বনভান্তের অনুসারী প্রজ্ঞালংকার ভান্তে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনা নন্দ মহাস্থবির বনভান্তের মৃত্যুর পুর্বে রের্কড করা অডিও বক্তব্য শোনানো হয়।
সেখানে তিনি তার দেশনায় বলেন, ধর্ম চক্ষু,ধর্ম জ্ঞান,ধর্ম বোধ উদয় হলে অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হয় না- সদ্ধর্ম দেশনাকালে বনভান্তে পরম সুখ ও শান্তি লাভে তথাগত ভগবান গৌতম বুদ্ধের অহিংসা পরম নীতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জাতিতে জাতিতে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে এবং সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সুখ ও শান্তিতে থাকতে হলে সবধরণের অপকর্ম, পাপ, হিংসা, বিদ্বেষ, অসত্য ও অজ্ঞানতা পরিহার করে সব সময় সৎ, ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে হবে। পাপীরা সব সময় অপকর্মে লিপ্ত হয়। অপকর্ম মানুষের অমঙ্গল ও বিপদ ডেকে আনে। এসবই অজ্ঞানতার কারণ ও হেতু। তাই যাবতীয় অপকর্ম পরিহার করে সৎকর্ম সম্পাদনই অতি উত্তম মঙ্গল।SAM_2429
উল্লেখ্য আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান গৌতম বুদ্ধের উপাসক বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে বৌদ্ধ পুরোহিতদের ব্যবহার্য চীবর (বস্ত্র) তৈরি করে দানকার্য সম্পাদন করার পদ্ধতিতে এ কঠিন চীবর দান প্রবর্তন করেন। প্রত্যেক বছর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধরা এই মহাপূন্যানুষ্ঠান কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী অংশ নেন। রাজবন বিহারে ১৯৭৪ সালে এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে বনভান্তে বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে সর্বপ্রথম কঠিন চীবর দান প্রচলন করেন। এর আগে রাঙামাটি জেলার তিনটিলা বৌদ্ধ বিহারের ১৯৭৩ সালে এই কঠিন চীবর দান করা হয়। বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী কঠিন চীবর দান ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে বনভান্তের অনুসারী বৌদ্ধ সম্প্রদায় সম্পাদন করে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 590 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen