সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা উন্নয়ন কমিটির সভা রবিবার (২৬নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফাউল সারোয়ার, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমা, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ দিলদার হোসেন, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল’সহ জেলা ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবনমানের টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান প্রধান, নাগরিক সমাজ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’সহ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে সকলের দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে তবেই উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও অর্জন ধরে রাখার লক্ষ্যে উন্নয়ন সভার মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তিনি পরিষদের প্রতিটি সভায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান।
সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, জেলার বসবাসরত সকল মানুষের কথা চিন্তা করে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো ও শব্দ দূষণ রোধে জেলা প্রশাসন হতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শহরে যেসব স্থানে সভা সমাবেশ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় শুধু সেসব স্থানে সাউন্ড বাজানোর বিষয়ে অনুমতি প্রদান করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন হতে সবসময় কঠোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবুও যে কোন স্থানে মাদক বিক্রী ও সেবনের কোন তথ্য থাকলে তা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, মসজিদ ভিত্তিক যে সকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেখানে সন্ত্রাস ও মাদকের বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তাগুলো উপস্থাপন করতে হবে। বিশেষ করে কোন রোহিঙ্গা যাতে এ জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, শব্দদূষণ রোধে বাইরের বিভিন্ন জেলা হতে আগত পর্যটকরা এ জেলার প্রবেশ মুখ হতে উচ্চ সুরে সাউন্ড না বাজায় সে লক্ষ্যে সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড ও ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পৌরসভার মেয়র বলেন, বর্তমানে পৌরসভার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। যার ফলে শহরের বনরুপা বাজারের কিছু কাঁচা বাজার ব্যবসায়ীদের বন বিভাগ কার্যালয়ের বাউন্ডারির বাইরে অস্থায়ীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাস্তা সংস্কার শেষে পুনরায় আগের স্থানে তাদের বসানো হবে। তিনি বলেন, গত ১৩জুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে শহরের অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। পৌরসভার পাশাপাশি সওজ ও এলজিইডি প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকেও তিনি দ্রুত রাস্তা সংস্কার করার অনুরোধ জানান।
রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি বলেন, সম্প্রতি মা ও শিশু কেন্দ্রে চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভবতী রোগী মারা যাওয়া’সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়। এছাড়া জেলার একমাত্র জেনারেল হাসপাতালটির মহিলা ওয়ার্ডের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
সভায় রাঙামাটি সরকারী কলেজের প্রভাষক বলেন, কলেজে সীমানা প্রাচীরের কাজ প্রায় ৫০ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কলেজের হোস্টেল চালু ও আসবাবপত্র প্রদানের বিষয়ে তিনি শিক্ষা প্রকৌশল, জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করেন।
সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক জানান, চলতি মাসের ৭ তারিখ শিক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কলেজে উপস্থিত আছে কিনা অভিভাবকদের মোবাইলে ম্যাসেজ পৌছে যাবে। এই কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন মহিলা সাংসদ।
তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, জেলার শুকুরছড়ি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি চালুর লক্ষ্যে যন্ত্রপাতির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে এই উপকেন্দ্রটি হতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক বলেন, আগামী মাসে কাউখালীর নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনটি চালু করার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঝুম নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বৃক্ষ রোপন অভিযান ২০১৭ সালের জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হবে। এর জন্য ১০টি ক্যাটাগরিতে বন বিভাগের কার্যালয় হতে ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, গত সেপ্টেম্বর হতে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল বিক্রী চলছে। বর্তমানে খাদ্য ভান্ডারে ৩০৬৩ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে।
এছাড়া সভায় উপস্থিত অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ স্ব স্ব বিভাগের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।