শিরোনামঃ

সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি স্মরনে

মেঘের কাছে আমরা আর কত দিন অপরাধী হয়ে থাকবো ?

সাগর-রুনি হত্যাকান্ড। বাংলাদেশের আলোচিত একটি অধ্যায় । এই অধ্যায় রচিত হয়েছেল বাংলাদেশের দুই বিশিস্ট সাংবাদিক এবং সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর সরোয়ার এবং রুনির হত্যার মাধ্যমে। ঢাকায় নিজ বাসায় নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন এই সাংবাদিক দম্পত্তি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রয়ারি সংগঠিত এই হত্যাকান্ডের ৪ বছর অতিবাহিত হলেও 9177_n২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এসেও উম্মোচিত হয়নি এই হত্যাকান্ডের রহস্যের। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছিলেন সরকারের সর্বোচ্চ মহল। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচিত হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়েছিল সেদিন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তৎকালীন পুলিশের আইজিপি কঠিন বাংলায় বলেছিলে প্রনিধান যোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর পর সবকিছুই হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হলেও সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের কোন রহস্যই উম্মোচিত হয়নি। এখনো বলা হচ্ছে সহসাই কিছু একটা হবে । আমাদের সাংবাদিক সমাজের প্রশ্ন কখন এই কিছু একটা হবে ? নাকি শুধূমাত্র সময় ক্ষেপন করা হবে ? বাস্তবে কিছুই হবে না?

সাগর সরোয়ার ছিলেন রাঙামাটির সাংবাদিকদের অতি কাছের বন্ধু। মূলত দৈনিক ইত্তেফাকে কর্মরত অবস্থায় শ্রদ্ধেয় মকছুদ ভাইয়ের পরিচয় সূত্রেই সাগর সরোয়ারের রাঙামাটিতে আগমন ঘটেছিল। সেই সময় সাগর সরোয়ার দৈনিক ইত্তেফাকের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিট দেখতো । কাজেই বিভিন্ন রিপোটিং এর জন্য প্রায়শ সে রাঙামাটি আসতো। বন্ধু বৎসল, নিরহংকরা অমায়িক এই সাগর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাঙামাটির সাংবাদিকদের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দের সাথে তাঁর খুব ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। সেই সুবাদে আমার সাথেও সাগরের ভাল বন্ধুত্বের সস্পর্ক গড়ে উঠেছিল । সাগর আর আমার এসএসসি পাশের সন ছিল ১৯৯০ । এর ফলে আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্ব পরবর্তীতে তুই সম্পর্কে গড়িয়েছিল। সেই থেকে সাগরকে খুব কাছ থেকেই দেখার সূযোগ হয়েছিল । রাঙামাটিতে বিভিন্ন এ্যাসাইনমেন্টে আসার পর সাগর সকলের সাথে এতো সহজে মিশে যেত যে সকলেই তাঁকে খুব ¯েœহ করতো । এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রদ্ধাভাজন সন্তু লারমা, প্রাক্তন উপমন্ত্রী মস্বিপন দেওয়ান সহ এখানকার অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও সাগরের কাছের মানুষে পরিনত হয়েছিল। তবে সাগর কখনো রিপোটিং এর কাজে এই সর্ম্পকের কখনো অপব্যবহার করেননি। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সে ছিল সব সময় সজাগ। হিল ট্রাক্টস বিট সম্পর্কে সাগর এতটাই সফল হয়েছিলেন যে সে সময় অনেক সিনিয়র সাংবাদিকরাও তার এই সফলতার কাছে আসতে পারেননি।

পরবর্তীতে সাগর বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় এনার্জি বিট এর রিপের্টি এর কাজ করতো। এখানেও সে ছিল সমান সফল । সে সময় সে একটি এনার্জি সাইট বিষয়ক অনলাইন পত্রিকাও চালু করেছিলেন। সাগরের অনুরোধে এই অনলাইনে আমি কিছুদিন অতিথি প্রতিবেদক হিসাবে কাজ করেছিলাম। সাংবাদিকতার সুবাদেই সাগরের সাথে পরিচয় ঘটেছিল অপর সাংবাদিক রুনির আর এই সর্ম্প পরবর্তীতে পরিনয়ে পরিনত হয়। সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পত্তি উভয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে জনপ্রিয় সাংবাদিক দম্পত্তিতে পরিনত হয়েছিল। আগেই বলেছি সাগরের সাথে আমার খুব ভাল একটা বন্ধুত্ব ছিল সেই সুবোদে সাগর রাঙামাটি আসলেই আমার বাসায় আসতো। অফিসে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চলতো। রুনাকে বিয়ে করার পর হানিমুন করার জন্য সাগর-রুনি দম্পত্তি রাঙামাটি এসেছিল এবং আমার মেহমান হয়েছিল। পরবর্তীতে সাগর—- রুনি দুজনেই জার্মানে পারি জমান । সেখানে একটি রেডিও তে কাজ করার সূযোগ পায় তারা। জার্মানিতেই সাগর-রুনি দম্পত্তির কোল জুড়ে আগমন ঘটে তাদের একমাত্র সন্তান মেঘের। সম্ভবত ২০১১ সালের শেষে দিকে সাগর বাংলাদেশে আসার পর আমার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছিল এবং আমার অনুরোধেই সম্ভবত ডিসেম্বর মাসে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছিল। রুনির ভাই, এটিএন বাংলার নাদিয়া কিরন ও এই সময় তাদের সাথে ছিল। পুরো টিম একরাতে আমার বাসায় আথিতেয়তা গ্রহন করেছিল। মেঘ আমার বাসায় অনেক ক্ষন আমার পোষা বিড়ালটির সাথে খেলেছিল। কথা ছিল রাঙামাটি থেকে যাওয়ার পর আবারো জার্মানীতে ফিরে যাবে তারা । যেহেতু মেঘ জার্মানীর নাগরিকত্ব পেয়েছিল সেহেতু সোনেই মেঘের লেখাপড়া করানো ইচ্ছ ছিল তাদের । ঢাকায় যাওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে সাগর তার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে যোগ দেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে। রুনিও যোগ দেয় এটিএন বাংলায় ।
মাঝখানে কিছুদিন যোগাযোগ ছিলনা তাদের সাথে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে সুনীল মামার কাছ থেকেই শুনেছিলাম সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের খবর। সেদিন কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিলাম । ভাবতেও অবাক লাগছিল সাংবাদিক দম্পত্তিকে কেউ এভাবে নৃশংস ভাবে হত্যা করতে পারে ।
সেদিন দেশের অপরাপর জেলার সাংবাদিকদের মতো রাঙামাটিতে কর্মরত সাংবাদিক সমাজ ও সাগর রুনি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে একই দাবীতে ২০১৬ সালের ১১ ফ্রেব্রুয়ারি রাঙামাটির সাংবাদিকরা আজ আবারো রাস্তায় নেমেছে। ৪ বছর পর হলেও এই হত্যাকান্ডের কোন দৃশ্যত অগ্রগতি দেশবাসী এবং সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রকাশিত হয়নি। এখনো সরকারের পক্ষ থেকে আশার বাণী সহসা উম্মোচিত হবে এই হত্যা রহস্যের ।

একটি আলোচিত হত্যাকান্ডের রহস্য ৪ বছরেও উম্মোচিত না হওয়াটা আমাদের জন্য হতাশাজনক । জানিনা এই হতাশা আরো কতো বছর দীর্ঘায়িত হয়।

বন্ধু সাগর-রুনি আমাদের তোমরা ক্ষমা করো কেননা আমরা তোমাদের হত্যাকারীদের এখনো খুজে বের করতে পারিনি। আর মেঘ তোমার কাছে পুরো বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ আজ অপরাধী কেন না তোমার মা-বাবার হত্যা কারীদের শাস্তি দিতে পারিনি। তোমার কাছে আমরা ক্ষমা প্রার্থী।

 

মোঃ মোস্তফা কামাল
সিনিয়র সাংবাদিক, রাঙামাটি।

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 360 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen