সুনীল কান্তি দে বা সুনীল দা নামে পরিচিত ব্যাক্তিটির সাথে ৩ পার্বত্য জেলা তো বটে ঢাকার সিনিয়র পর্যায়ের সাংবাদিকদের সাথে তার যোগাযোগ ভালো। তিনি সবার বিপদে আপদে নিজের সাধ্যমতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন না করলেও আন্দোলনকে সুসংগঠিত করতে এই মানুষটির অবদান ছিল অসামান্য। আন্দোলন সংগ্রামের কারনে তাকে কয়েক দফায় জেলে যেতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন ক্রীড়ামোদী ও সাংস্কৃতিক পাগল মানুষ।
সুনীল কান্তি দে ১৯৪৭ সনের ৪ জুন রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার বেকারী লেইন এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা – বিজয় কৃষ্ণ দে, মাতা-কিরণ বালা দে। লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হিসেবে প্রথম চাকুরীতে যোগ দেন। সাংবাদিকতার পেশা গ্রহনের পূর্ব হতেই তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক (১৯৬৫), ১৯৭১ মহান মুক্তি যুদ্ধের শুরুতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সমগ্র পার্বত্য অঞ্চলের (বর্তমান তিন পার্বত্য জেলা) মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠঠিত করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষনের অংশগ্রহন শেষে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ গ্রহনের রিক্যুক্টমেন্ট এর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ের ঘটনাপ্রবাহ শান্তিপূর্নভাবে সমাধানের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি ১৯৮১ সনের ৪ঠা জুন মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয়। প্রায় ৩ বছর পর তিনি কারামুক্তি পান।
সুনীল কান্তি দে পিআইবির বুনিয়াদি প্রশিক্ষন ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার প্রশিক্ষনে অংশগ্রহন করেছেন। তিনি ১৯৭৫ সনে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদদাতা, ১৯৯২-১৯৯৪ সন পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, এবং ১৯৯৮ সন থেকে দৈনিক সংবাদের পার্বত্য অঞ্চল প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একুশে টেলিভিশনের জন্ম থেকে শুরু করে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এবং পুনরায় চালু হওযার এক বছর পর্যন্ত রাঙামাটি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া ১৯৯৭ সন থেকে সাপ্তাহিক বনভুমির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, ১৯৯৩ – ১৯৯৮ সন পর্যন্ত দৈনিক গিরিদর্পনের বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ( ১৯৭৮ থেকে ৮৮) পর্যন্ত টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খেলাঘর আসর ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি রাঙামাটি জেলা শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি,কাপ্তাই হৃদ মৎস্য ব্যাবসায়ী সমিতি এবং দ্বীপায়ন শিল্পি গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সদস্য, সহ-সম্পাদক, যুগ্ন সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে (১৯৬৫-১৯৯৩) দায়িত্ব পালন করেন।
রাঙামাটি প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক রাঙামাটির সম্পাদক আনোয়ার আল হক সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে সর্ম্পকে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল দা মুলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় সমভাবে পরিচিত কল্পনাতীত জনপ্রিয় ও সদালাপী ব্যক্তি। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামই নয় রাজধানীতেও শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনসহ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের কাছে ‘সুনীল কান্তি দে’ নামটি বেশ পরিচিত। পার্বত্য এলাকায় সাংবাদিকতাকে পেশাদারিত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার অবদান এখানকার সংবাদ কর্মীরা চিরদিন স্মরণ করবে। তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেন, ভালো বলেন এবং আজীবন মানুষ ও মানবতার কল্যাণ এবং উপকারীতার জন্য কাজ করে চলেছেন। তবে আমার যতটুকু মনে হয়, তিনি তাঁর জীবনের আদর্শ ও লক্ষ্য নির্ধারনে দ্বিধান্বিত থাকায়, জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তার সমালোচনাও অনেক বেশী। এ ধরণের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব- তার কাছ থেকে উপকার নেওয়া মানুষদের কাছেই কেন সমালোচিত হন, সে বিষয়টি তাঁর আর একবার ভেবে দেখা দরকার। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সমাজ বিনির্মানে তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কাছে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে।
পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডট কম এর সম্পাদক ও তরুন সাংবাদিক ফজলে এলাহী বলেছেন, ‘সুনীল কান্তি দে কেবল একজন সাংবাদিকই নয়, পাহাড়ে সাংবাদিকতার পথিকৃতও। একই সাথে তিনি পাহাড়ের সকল প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামেরও অন্যতম উদ্যোক্তা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ক্রীড়া,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সকল আয়োজনে তিনি স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মেধা,প্রজ্ঞা, আর অসাধারণ বাগ্নিতার সমন্বয়ে পড়–য়া এই মানুষটি তাই তরুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে একজন আইডলও। সংবাদকর্মীদের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর অনন্য গুণটি তাকে অন্য অনেকের চেয়ে স্বাতন্ত্র্য একটি অবস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।’