শিরোনামঃ

বাঙালি ছাত্র পরিষদের সম্মেলন, নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা : অর্বাচীন বাঙাল

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের অবস্থান, টিকে থাকা, ভূমি অধিকার, মৌলিক প্রয়োজন এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যত ক্রমশ চ্যালেঞ্জর দিকে ধাবিত হচ্ছে। খোলাচোখে এটি বোঝা না গেলেও PBCP-অথবা দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় প্রতিভাত না হলেও এটি এক অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ। বরং পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালিদেরকে মোটাদাগে উগ্র, সেটেলার, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, অপরাধীসহ নানা নিন্দনীয়-অগ্রহনযোগ্য ও অশ্রাব্য অভিধায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে তুলে ধরার প্রবণতা বাড়ছে। তার মানে আমি এটি দাবী করছিনা যে, বাঙালিদের মধ্যে সবাই খুবই ভালো মানুষ। প্রত্যেক সমাজ-সম্প্রদায়েই কমবেশী ভালোমন্দ মানুষ থাকতে পারেন। পরিকল্পিতভাবে দূরদর্শী চিন্তার নির্মাণশৈলীতে একটি বিশেষ এলাকার বিশেষ জনগোষ্ঠিকে সারাদেশে এবং অধিকাংশ সময় বিদেশেও হীনভাবে উপস্থাপনের ধারাবাহিক অপচেষ্টার ফলে একটি প্রজন্মের মননে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ছোট হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম কিন্তু ছোট নয়। দেশের মুল ভূ-খন্ডের দশভাগের এক অংশ। ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলে যেমন ছিলো বিদেশীদের শকুনি চোখ; তেমনি এখনো সম্পদ সম্ভাবনার দিকে চেয়ে আছে হাজারো বিদেশী শক্তি। এসব সুক্ষ্ম রাজনীতির অস্ফুট উপকরণগুলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর তাই তাঁরা দ্রুততার সাথে দ্রুততম সময়ে বেশকিছু ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছিলেন।
সেসব পদক্ষেপের সুফল যেমন বাঙালিরা ভোগ করছেন; তেমনি পার্বত্য এলাকার পাহাড়িরাও ভোগ করছেন। এরশাদ সরকারের সময়েও অনেকগুলো পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে পার্বত্যাঞ্চলের উভয় জনগোষ্ঠি লাভবান হয়েছেন।
কিন্তু একই দেশ, একই মানচিত্র ও একই রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার ভেতর থেকেও পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালিরা চুড়ান্তভাবে অস্তিত্বের নিশানা দাঁড় করাতে পারেননি।
তার কারণ হিসেবে আমার মতো অজ্ঞজনদের কাছে মনে হয়েছে বাঙালিদের অনৈক্য, আন্দোলন বিমুখতা, আন্দোলন সর্ম্পকে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা তৈরী করতে না পারা, কোন কোন সময় সুবিধাবাদিতা, বাঙালি সমাজের কতিপয় শিক্ষিত ও বিত্তবানদের অসহযোগিতা এবং অধিকন্তু কম কষ্টে হঠাৎ লাভবান হবার প্রবণতা।
এর বাইরেও অনেক যৌক্তিক-গ্রহনযোগ্য কার্যকারণ থেকে থাকতে পারে।
‘পার্বত্যচুক্তি’র আগে ও পরে, স্থায়ী-অস্থায়ী, চট্টগ্রামী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সেটেলার ও নন-সেটেলার; এ ধরনের নানা বিভেদপন্থী ফেরকা ফেঁদে বাঙালিদের বৃহত্তর ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে ধর্মীয় বিরোধকেও সামনে আনা হয়, কখনো কখনো।
কিন্তু পার্বত্য এলাকার বাঙালিরা এখনো পর্যন্ত বুঝে উঠতে সমর্থ হয়নি যে, বাঙালির হাজার বছরের ক্রমবিকাশ; আন্দোলন এবং লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই। আন্দোলন যে কখনো বৃথা যায় না, এই অমোঘ সত্যিটা পার্বত্য এলাকার বাঙালিদের কাছে কার্যকরভাবে প্রথম জানান দিয়েছে, ‘পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ’-ই।
আজ শনিবার (২৫ এপ্রিল) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিগত ১৯৯১ সালে জন্মলাভকারী এই সংগঠনের অর্জন আর ব্যর্থতা বিচার করার সময় অনেক আছে। কিন্তু এই শুভক্ষণে আমি ভাবছি ‘পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ’র সম্ভাবনা নিয়েই।
অতীত ২৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার নামে কয়েক ডজন সংগঠনের জন্ম হয়েছে। কোনটি একমাস, কোনটি একবছর আবার কোনটি নাম পাল্টে-ভোল পাল্টে নানাসময়ে নানারুপে টিকেছিলো। নেতারা বিকিয়েছেন নিজে-নীতিতে এবং অর্থে-বিত্তে। আবার কোন কোন সময় বাঙালি ছাত্র পরিষদও সময়ের প্রতিকূল স্রোতে পথ হারিয়েছে সাময়িক। নেতার নীতি-কর্তৃত্ব অথবা রাজনীতির মারপ্যাঁচে লাঠিমের মতো ঘুরেছে একই বৃত্তে। এখন সব অতীতকে মাথায় রেখেই আজ নির্ধারিত হবে নতুন নেতৃত্ব-নতুন মানুষ-নতুন বক্তা।
একবার চোখ দেয়া যাক, তিন পার্বত্য জেলার জাতীয় রাজনীতির দিকে। সরকার কী, বিরোধীদলে; মিছিল-মিটিং-হামলা-মামলা-জেল-জুলুম; সবখানেই সবদলেই বাঙালিরাই অগ্রভাগে। আর পদ-পদবী, সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়েও বাঙালিরাই।
অপরদিকে তাঁরা (নামটি উহ্য রাখলাম) জাতীয় পার্টি-আওয়ামীলীগ-বিএনপি; যখন যে ক্ষমতায় থাক, মজার মাঝখানে তাঁরাই। তাঁরা একে-অপরের স্বজন হয়ে যান। নিলর্জ্জের মতো ন্যায়-নীতি ভুলে হাতিয়ে নেন সম্মিলিতভাবে সরকারী-দেশী-বিদেশী সুযোগ সুবিধা। আর বাঙালিরা আওয়ামীলীগ-বিএনপি করতে করতে কম্বল উজাড় করে। তাঁরা রাজপথে আওয়ামীলীগ-বিএনপি, আর রাতের আঁধারে ‘ড্রয়িংরুম পলিটিক্স’-এ এককাতারে।
আমার মাথায় মাঝে মাঝে অহেতুক প্রশ্নের উদ্রেক করে। কেনো সব বাঙালি আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র বাইরে একটি স্থায়ী ও আন্দোলনে চলমান ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’-র কথা ভাবতে পারেনা?
তাই আশা করবো, ‘পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ’-এই সম্মেলনের মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী নেতৃত্ব যেমন উঠে আসবে, তেমনি নেতারাও যাতে পার্বত্যাঞ্চলের সকল মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা অর্জনের মাধ্যমে বাঙালিদের সুখ-দুঃখে দাঁড়াবার সৎ সাহস অর্জন করতে পারে।
তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি হতে হবে জনসম্পৃক্ত, নিয়মতান্ত্রিক, যুক্তিগ্রাহ্য এবং ঐক্যবদ্ধ। অন্যরা উগ্রতা, পেশীশক্তি, আইন অমান্যের ধৃষ্টতা এবং অপরাধপ্রবণ আচরণ করবে বলে, বাঙালি ছাত্র পরিষদকেও তাই করতে হবে; এমন কোন কথা নেই।
ওরা, অনেক কম পথ পাড়ি দিয়েই এগোতে পারবে। কারণ, তাঁদের আন্দোলনের বয়স যেমন বেশী, তেমনি প্রাপ্তিও বেশী। তাই বাঙালি ছাত্র পরিষদকে আন্দোলন আর ধৈর্য্যবান নেতৃত্বের পথ ধরে নির্লোভ স্বপ্নে প্রণোদিত হতে হবে। যেতে হবে অনেকটা অজানা পথ। নিশ্চয়ই একদিন প্রত্যাশিত গন্তব্যে দেখা দেবে আলোকরশ্মি।

 

(একজন স্বাধীন পাঠকের মন্তব্য। তাঁর মতের সাথে সিএইচটি টুডে’র সম্পাদকীয় নীতিমালার কোন সর্ম্পক নেই।)

Print Friendly, PDF & Email

Share This:

খবরটি 583 বার পঠিত হয়েছে


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*

Time limit is exhausted. Please reload CAPTCHA.

ChtToday DOT COMschliessen
oeffnen