হিমেল চাকমা, অতিথি প্রতিবেদক রাঙামাটি। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খিয়াং, পাংখোসহ প্রায় ১৪টি ছোট ছোট জাতির বসবাস পার্বত্য চট্টগ্রামে। এদের আছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি। এই ভাষা সংস্কৃতিতে গর্ব এবং প্রয়োজনে ব্যবহারও করছে রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্রের সংবিধানে আদিবাসী ও এদের ভাষা সংস্কৃতির স্বীকৃতি নেই। স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন করছে আদিবাসীরা। কিন্তু মিলছে না স্বীকৃতি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের মন্ত্রীসহ দেশী-বিদেশী বড় কোন পদস্থ কর্মকর্তা আসলে বৈচিত্রময় পার্বত্য চট্টগ্রাম হিসেবে উপস্থাপন করতে প্রশাসন আয়োজন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পরিবেশন হয় আদিবাসী তরুণীদের নৃত্য। কিন্তু বৈচিত্রময় এ সংস্কৃতি স্বীকৃতির দাবীর সময় সরকার তথা প্রশাসনের কাউকে পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস।
সারা বিশ্বের ন্যায় তিন পার্বত্য (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) জেলায় পালিত হচ্ছে দিবসটি। বিগত সময়গুলোতে সরকার এতে পৃষ্ঠপোষকতা করলেও পঞ্চদশ সংবিধানের সংশোধনীর পর থেকে সরকার সরে গেছে। সরকার ও প্রশাসনে কোন কর্মকর্তা যেন আদিবাসী দিবসে অংশ না নেয় সেজন্য নির্দেশও জারি আছে। ফলে আদিবাসীরা নিজ উদ্যোগে পালন করছে দিবসটি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অভিযোগ, সরকার আদিবাসীদের ভারসাম্য নষ্ট করতে নদী ভাঙ্গন এলাকার লোকদের পার্বত্যাঞ্চলে পুনর্বাসন অব্যাহত রেখেছে। ফলে আদিবাসীরা হারাচ্ছে তাদের ভুমি, ভাষা-সংস্কৃতি। সরকার এগুলো বন্ধ না করলে আদিবাসীদের ভবিষ্যত আরো হুমকির মুখে পড়বে।
আদিবাসী গবেষক ড. মানিক লাল দেওয়ান বলেন, আদিবাসীর স্বীকৃতি দেওয়া হলে তাদের নায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তারমধ্যে ভুমি অন্যতম। আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি রক্ষা পাবে। কিন্তু সরকার তা চায় না। দেশের কল্যাণে আদিবাসীদের চেয়ে সরকারকে আগে এগিয়ে আসার কথা বললেন তিনি।
এদিকে সরকার মনে করে পার্বত্যাঞ্চল থেকে আদিবাসী হারিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে এই চিন্তায় পার্বত্য জেলাগুলোতে স্থাপন করে রেখেছে উপজাতীয় জাদুঘর। এতে গেলে চোখে পড়ে গ্লাস বদ্ধ হারিয়ে যাওয়া আদিবাসী মুর্তি, ছবি, আসবাবপত্রসহ আদিবাসীদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম।
আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আদিবাসী দিবসে তারা এবারও সেই দাবী তুলে ধরবে সরকারের কাছে।
জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আদিবাসী তারা, যারা একটি দেশের অভ্যন্তরে যেসব জাতি দেশের মুল¯্রােতধারার জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা। মুলধারা জনগোষ্ঠীর চেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এদের সমাজ ব্যবস্থাও আলাদা। এদের ভাষা সংস্কৃতি আলাদা। এরা প্রথাগত আইনের ভিত্তি করে পারিবারিক আইন ও আভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করে। ভুমির সাথে এদের রয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক সর্ম্পক। আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের সময় এদের মতামত ছিল উপেক্ষিত। রাষ্ট্রে তারা যুগে যুগে ছিল অবহেলিত তারা আদিবাসী বলে বিবেচিত হবে।
কিন্তু রাষ্ট্র এদের স্বীকৃতির পরিবর্তে কখনও উপজাতি, কখনও আদিবাসী। কখনও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। কখনও বাঙালী আখ্যায়িত করে একের পর এক বির্তক সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীতে দেশের মুল ¯্রােতধারার বাঙালী জাতিকে আদিবাসী বানাতে গিয়ে আদিবাসীরা পরিণত হয় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীকে। কিন্তু এই শব্দকে মানতে পারেনি আদিবাসীরা। এর প্রতিবাদ ও সংবিধানে স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন অব্যহত রেখেছে আদিবাসীরা।